উৎসব ম্লান, বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত মা ও মেয়ে-সহ পাঁচ
আনন্দবাজার | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
বাড়িতে এক প্রকার উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। সোমবার ছিল কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। রাত ফুরোলেই আজ, মঙ্গলবার পরিবারের ছোট মেয়ের জন্মদিন। পুজোর বাজার সারা হয়ে গিয়েছিল। ছোট মেয়ের জন্মদিনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। মধ্যপ্রদেশ ঘুরে লক্ষ্মীপুজোর সকালে মা ও মেয়ের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিল গোটা পরিবার। কিন্তু কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে ওঁদের বাড়িতে নেমে এসেছে অন্ধকার। পুজোর বদলে পরিবারের কেউ ব্যস্ত ছিলেন দুর্ঘটনায় নিহত আত্মীয়ের দেহ আনতে মধ্যপ্রদেশে ছুটতে। কারও দিন-রাত কেটেছে স্বজন হারানোর শোকে।
বাঘা যতীনের বাপুজিনগর কলোনির বাসিন্দা, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা পরমা ভট্টাচার্য তাঁর দুই মেয়ে অদিত্রী এবং অদ্রিকাকে নিয়ে সপ্তমীতে রওনা হয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই প্রাক্তন সহকর্মী অন্বেষা সোম ও পপি বর্মা এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা। কানহা, অমরকণ্টক ঘুরেলক্ষ্মীপুজোর সকালে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল সকলের। পরমার ছোট মেয়ে অদিত্রীর জন্মদিন আজ, মঙ্গলবার। বিলাসপুর থেকে ওই দলটির ট্রেনে চাপার কথা ছিল রবিবার রাতে। কিন্তু তার আগে সে দিনই দুপুরে বিলাসপুরের কাছেহাইওয়েতে মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান পরমা, অদিত্রী, অন্বেষা ও পপি। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় গাড়িচালকেরও। মৃতদের পরিজনেরা জানান, একটি ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মেরে গাড়িটি প্রায় তার নীচে ঢুকে গিয়েছিল বলেই তাঁরা জানতে পেরেছেন।
আকস্মিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরমাদের প্রতিবেশীরা। সোমবার লক্ষ্মীপুজোর সকালে পরমাদের বাড়িতে শুধুই কান্নার রোল। পুত্রবধূ ও ছোট নাতনির মৃত্যুশোকে কথা বলার অবস্থায় নেই অদিত্রী-অদ্রিকার ঠাকুর্দা স্মৃতিরঞ্জন ও ঠাকুরমা মঞ্জুশ্রী। কাঁদতে কাঁদতে তাঁরা বললেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর সব প্রস্তুতি সারা ছিল। শুধু প্রতিমা আনার কথা ছিল সোমবার সকালে। সব শেষ হয়ে গেল।’’ মঙ্গলবার সকালেই স্ত্রীর দেহ আনতে আর বড় মেয়েকে দেখতে ট্রেনে মধ্যপ্রদেশ রওনা হয়ে যান পরমার স্বামী ইন্দ্রজিৎ। ফোনে কাঁদতে কাঁদতে তিনি শুধু বলেন, ‘‘ছোট মেয়েটা লক্ষ্মীপুজোর দিন হয়েছিল। ১১ বছর বয়স। সেই লক্ষ্মীপুজোতেই চলে গেল। মঙ্গলবার ওর জন্মদিন ছিল। কিছু ভাবতে পারছি না। বড় মেয়ে ঠিক আছে বলে শুনেছি।’’
ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই মৃতদের পরিজনেদেরও। তাঁরা জানান, রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকেই তাঁদের কাছে ফোন আসে। স্থানীয় একটি হিন্দি সংবাদপত্র থেকে তাঁরা জানতে পারেন, ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মারে পরমাদের গাড়িটি। পরমা ও তাঁর ছোট মেয়ে চালকের পাশের আসনে ছিলেন। বাকিরা ছিলেন পিছনে।
দুর্ঘটনায় মৃত অন্য দুই শিক্ষিকার মধ্যে পপির বাড়ি কল্যাণীতে, অন্বেষা থাকেন হাজরায়। তাঁদের পরিজনেরা জানান, পরমা, পপি ও অন্বেষা এক সময়ে ডানকুনির একটি স্কুলে একসঙ্গে চাকরি করতেন। পরে পরমা কলকাতার একটি স্কুলে বদলি হন। তবে তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা একসঙ্গে বেড়াতে যেতেন। পপির স্বামী উত্তম সরকার বলেন, ‘‘কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ছেলে ঠিক আছে। আমি ট্রেনে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। ওখানে গিয়েই সব জানতে পারব।’’ একই কথা শোনা গিয়েছে অন্বেষার স্বামী, পেশায় চিকিৎসক চিরঞ্জিৎ মাঝির মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে হাসপাতালে রয়েছে। স্ত্রীর দেহ আনতে যাচ্ছি। ঘটনার কোনও ব্যখ্যা নেই আমার কাছে। সোমবারই তো ওদের ফেরার কথা ছিল।’’