• ধর্মডাঙার পুজোয় তন্ময়দের সঙ্গে কাঁধ মেলান ইরফানরা
    এই সময় | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • সূর্যকান্ত কুমার, কালনা

    বৃষ্টিতে মণ্ডপের সামনে জল জমে যাওয়ায় সোমবার সকালেও চিন্তা ছিল। কিন্তু কালনার ধর্মডাঙার পল্লীশ্রী সঙ্ঘের লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপের সামনে জমা জলের সমস্যার সমাধান করে দিলেন আবু শেখ, ইনসান শেখরা। সবাই মিলে হাত লাগিয়ে মাটি ফেলায় আর নেই জমা জলের সমস্যা।

    এ ভাবেই লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতিতে তন্ময়, বাপন, সুশান্তদের সঙ্গে নাওয়া-খাওয়া ভুলে হাত লাগালেন এই গ্রামেরই আবু, ইরফান, ইনসানরা। কালনা শহর লাগোয়া ধর্মডাঙা গ্রামে এটাই দীর্ঘদিনের পরম্পরা। গ্রামের প্রধান উৎসব লক্ষ্মীপুজোয় শুধু হিন্দুরা নন, চাঁদা তোলা থেকে পুজোর জিনিসপত্র কেনায় শামিল হন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজনও। আবার তেমনই মুসলমানদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদে অংশ নেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন। ধর্মের বেড়া ভেঙে উভয় সম্প্রদায়ের একাত্ম হয়ে ওঠাই বৈশিষ্ট্য ধর্মডাঙার।

    দুর্গা বা সরস্বতী নয়, কালনা শহর লাগোয়া ধর্মডাঙায় লক্ষ্মীপুজোই বড় উৎসব। পুজো চলে চার দিন ধরে। গ্রামের স্কুলের সামনে সবথেকে বড় পুজো পল্লিশ্রী সঙ্ঘের। এই পুজো এ বার ৪২ বছরে পা দিল, প্রতিমার উচ্চতা ১৫ ফুটের মতো।

    এই চারটে দিন সুশান্ত, তন্ময়, বাপন, আবু, ইনসান, ইরফানদের সবার ঠিকানা পুজোমণ্ডপ। একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়া থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবেতেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকেন তাঁরা। ইনসান বললেন, 'পুজোর কটা দিন অন্য কোনও কাজ রাখি না। মাইকের ব্যাপারটা পুরোপুরি আমার দেখার দায়িত্ব থাকে।'

    আবু বললেন, 'মণ্ডপ চত্বর সাফাইয়ের কাজটা বাকি ছিল। সেটা সেরে নিলাম। এটাই এই গ্রামের পরম্পরা। আমাদের একসঙ্গে চলাফেরা, বসবাস। কোনও ভেদাভেদ নেই।'

    পল্লিশ্রী সঙ্ঘের সভাপতি রিপন মণ্ডল বললেন, 'আমাদের কাছে প্রথম হচ্ছে মানুষ। এখানে হিন্দু, মুসলমান বলে কোনও ভেদাভেদ নেই। ওরা যেমন লক্ষ্মীপুজোয় অংশ নেয়, তেমন ওদের অনুষ্ঠানে আমরা যাই। চাঁদা তোলা থেকে প্রতিমা আনা, পুজোর বাজার করা সব কিছুতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ওরা।'

    সম্পাদক তন্ময় দাস বললেন, 'উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের চাঁদায় পুজোর আয়োজন হয়। এই পরম্পরা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ ভাবেই আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই।'

  • Link to this news (এই সময়)