প্রসব বেদনা নিয়ে গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে গেলে ফিরিয়ে দিলেন চিকিৎসক, সত্য ঘটনায় চমকে যাবেন, যগীরাজ্যের ঘটনা ঘিরে তীব্র বিতর্ক...
আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলায় এক মুসলিম মহিলাকে ধর্মের কারণে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, জেলার সরকারি হাসপাতালে ডেলিভারির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। গর্ভবতী মহিলাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, "আমি মুসলিম মহিলার চিকিৎসা করব না।" ঘটনাটি সামনে আসে একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও-র মাধ্যমে। এটি নিয়ে ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে। জানা গিয়েছে, ওইদিন রাত ৯.৩০ নাগাদ জেলাশাসনের অন্তর্গত বিড়িবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শামা পারভীনকে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে জেলার স্থানীয় মহিলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখন কর্তব্যরত ছিলেন এক মহিলা চিকিৎসক।
পরে চলতি মাসের ১ তারিখ সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেখানে শামা পারভীনকে বলতে শোনা যায়, "চিকিৎসক বললেন, 'আমি মুসলিম মহিলাকে চিকিৎসা করব না।' তোমার ডেলিভারি করব না। নার্সকেও বলেন যেন অপারেশন থিয়েটারে না নেওয়া হয়। আমাদের পরিবারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি অন্য কোথাও নিয়ে যেতে।"
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, জেলা হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ড: মহেন্দ্র গুপ্ত অভিযুক্ত চিকিৎসককে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি জানান, "ডাক্তার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্মীয় বিদ্বেষের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত হয়েছে এবং উচ্চ কর্তৃপক্ষকে খবর পাঠানো হয়েছে।"
তবে বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগে দু'জন স্থানীয় সাংবাদিক- ময়ঙ্ক শ্রীবাস্তব ও মোহাম্মদ উসমানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, ওই দুই সাংবাদিক জোর করে লেবার রুমে ঢুকে ভিডিও তোলে এবং হাসপাতালের অন্দরে ক্ষতি করে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রাজনীতির পারদ চড়ছে। সমাজবাদী পার্টির মছলিশশহরের বিধায়ক রাগিনী সোনকর বলেন, "এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। রাজ্য জুড়ে যেভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ছড়ানো হয়েছে, তারই ফল এটা। কোনও প্রসব যন্ত্রণায় কাতর নারী মিথ্যে অভিযোগ করেন না।"
বক্তব্যে তিনি আরও যোগ করেন, "ডাক্তারকে জবাবদিহি করানোর পরিবর্তে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে সরকার দেখিয়ে দিল, তারা সত্যিটা মেনে নিতে রাজি নয়।"
ঘটনায় কংগ্রেস নেতা বিকেশ উপাধ্যায় বিক্কিও তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, "একজন চিকিৎসক সমাজের সকল শ্রেণির সেবা করার শপথ নেন। তিনিই ধর্মের ভিত্তিতে রোগী বেছে নিচ্ছেন- এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে? একজন প্রসব যন্ত্রণায় কাতর গর্ভবতীর কোনও জাত, ধর্ম থাকে না। দোষী প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।"
অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্র অবনীশ ত্যাগী বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে বলেন, "এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজ্য সরকারের 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' নীতির অন্তর্গত প্রতিটি মানুষ সমান সুযোগ পাচ্ছে। তা বাড়ি হোক, রেশন হোক, বা স্বাস্থ্য পরিষেবা। এই ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ শুধুই সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা।"
ঘটনার জেরে তদন্ত জারি রয়েছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিও এবং প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে জনমনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠছে। সত্যিই কি ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে চিকিৎসা বঞ্চনা? নাকি রাজনৈতিক মদতে অন্য কোনও উদ্দেশ্য কাজ করছে? উত্তর খুঁজছে জৌনপুরবাসী।