• পরিষেবায় বিস্তর গাফিলতির অভিযোগ, ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ওলা, হু হু করে কমছে বাজার দখল...
    আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বছরের পর বছর ধরে ওলা ইলেকট্রিকের পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্কুটার সারানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অমীমাংসিত অভিযোগের পাহাড় নিয়ে দেশজুড়ে সরব হয়েছেন বহু গ্রাহক। এই পরিস্থিতিতেই সম্প্রতি নেটমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ওলার একাধিক ক্ষুব্ধ গ্রাহককে তাঁদের স্কুটারের সমস্যা নিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে।

    এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, "ওলা কিনুন আর জীবনভর অনুশোচনা করুন। আমার বাড়ির কাছেই ওলার একটি শোরুম আছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন একজনেরও দেখা পাইনি যিনি ওলা কিনে সন্তুষ্ট।প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে!" ভিডিওর একেবারে শুরুতে এক গ্রাহককে পরিষেবা কেন্দ্রের এক আধিকারিকের সঙ্গে রীতিমতো হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। পাশ থেকে অন্য এক গ্রাহককে বলতে শোনা যায়, "আমি শুধু একবার গাড়িতে সামান্য একটি কাজ করতে বলেছিলাম, আর তার জন্য গাড়িটা চার মাস ধরে পড়েই ছিল।" আর এক হতাশ ক্রেতার মন্তব্য, "পরিষেবা দিতে না পারলে শোরুম বন্ধ করে দিন না!"

    সামাজিক মাধ্যমে এর কমেন্ট বক্সও ব্যবহারকারীদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার বিবরণে উপচে পড়েছে। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "গত এক বছর ধরে ওলার জন্য হেনস্থার শিকার হচ্ছি। এখন সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছি। কেউ জিজ্ঞাসা করলে একটাই কথা বলি, জীবনে যতই ভুল করুন, কিন্তু কখনও ওলা কিনবেন না। ইতিমধ্যেই ১০ জনকে কেনা থেকে আঁটকিয়েছি, আগামী দিনে আরও ১০০ জনকে করব।"

    অন্য একজন, ওলার সিইও ভাবিশ আগরওয়ালকে ট্যাগ করে লিখেছেন, "এটা দুঃখজনক যে গ্রাহকদের হতাশা দেখেও ওলা ইলেকট্রিকের টনক নড়ছে না। রোজ টুইট, ফোন এবং বারবার পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়েও কোনও উত্তর পাইনি। আমার স্কুটারটি দু'মাস ধরে সারানোর জন্য পড়ে আছে। ভাবিশ আগরওয়াল, এটা কি পরিষেবার চরম ব্যর্থতা নয়?"

    আরেকজনের অভিজ্ঞতা, "আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটছে। প্রথমত, এদের সামগ্রী জঘন্য। কোনও যন্ত্রাংশই আসল নয়। কেনার এক মাসের মধ্যেই মোটর খারাপ হয়ে গেল, এখন অ্যাক্সিলারেটরের সমস্যা। যেখান থেকে স্কুটার কিনেছিলাম, সেই শোরুমে গেলে তারা বলছে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।"

    অন্য এক মন্তব্যে সম্ভাব্য ক্রেতাদের জন্য সতর্কবার্তা ভেসে এসেছে, "ওলা এস১ এক্স কিনেছিলাম। সংস্থা দাবি করে এর মোটর ৪০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে, কিন্তু আমার স্কুটারের মোটর মাত্র ৯,০০০ কিলোমিটারে বিকল হয়ে গিয়েছে। পরিষেবা কেন্দ্র থেকে জানিয়েছে, এটি সারাতে দু'মাস সময় লাগবে। আমি এই গাড়ি না কেনারই পরামর্শ দেব।"

    এই অভিযোগের আবহেই এক ব্যক্তি ওলার স্কুটার কেনার আগে চ্যাটবট 'গ্রক' এর কাছে রিভিউ জানতে চান। গ্রকের উত্তর ছিল, "ওলা বাইক (এস১ সিরিজ) কেনার কথা ভাবছেন? রিভিউ কিন্তু মিশ্র। সুবিধা- ভাল রেঞ্জ, আকর্ষণীয় ফিচার, সাশ্রয়ী মূল্য। অসুবিধা- ২০২৫ সালে পরিষেবায় দেরি, ব্যাটারির সমস্যা এবং নির্মাণগত ত্রুটি নিয়ে প্রচুর অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথাই বেশি। কেনার আগে টেস্ট রাইড নিন।”

    অবশ্য ওলা ইলেকট্রিকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এই ক্ষোভ নতুন নয়। ২০২৩ সালেও একটি ভিডিও শোরগোল ফেলেছিল। মধ্যপ্রদেশের এক পরিষেবা কেন্দ্রের বাইরে একদল ক্ষুব্ধ গ্রাহককে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায়। তাঁদের দাবি ছিল, ডিলারশিপ নতুন গাড়ি বিক্রি করে চললেও গ্রাহকদের পুরনো অভিযোগের সুরাহা করছে না, তাই পরিষেবা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হোক।

    গত বছর নভেম্বরে, কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ওলা ইলেকট্রিকের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এক বিস্তারিত তদন্ত শুরু করে। এর আগে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর সংস্থাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিসও পাঠানো হয়েছিল। ওলার পক্ষ থেকে ৯৯.১০ শতাংশ অভিযোগের সমাধান করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, সিসিপিএ-এর পর্যালোচনায় সেই তথ্যে গরমিল মেলায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

    এই লাগাতার অভিযোগ এবং পরিষেবার সমস্যা সংস্থার বাজার দখলেও সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। খবর অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যেখানে ওলার বাজার দখল ছিল ৩৮.৮৩ শতাংশ, তা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এক ধাক্কায় কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৩৫ শতাংশে। অর্থাৎ, বার্ষিক হিসাবে তাদের বাজার দখল ৫৭ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)