• বন্যা বিধ্বস্ত নাগরাকাটা, দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে রোগী দেখতে গেলেন চিকিৎসক, গড়লেন অনন্য নজির ...
    আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: হয় জল, নয়তো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ। ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নাগরাকাটায় চিকিৎসক হিসেবে অনন্য নজির গড়লেন স্থানীয় ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অফ হেলথ (বিএমওএইচ) ডাঃ: ইব্রাহিম মোল্লা। রোগীর চিকিৎসায় দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে পৌঁছে গেলেন ঘটনাস্থলে। বামনডাঙা এলাকায় চিকিৎসার অভাবের কথা জানতে পেরে তিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই পৌঁছে যান দুর্গত মানুষের পাশে। ধস নেমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় বাধ্য হয়েই এইভাবে বিপজ্জনক পথ অতিক্রম করে পৌঁছতে হয় তাঁকে।

    বন্যা ও ভূমিধসে আটকে পড়া মানুষদের চিকিৎসা ও প্রাথমিক সেবা দিতে তাঁর এই উদ্যোগে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসার ঝড় উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁর এই ত্যাগ ও মানবিকতার প্রশংসা করা হয়েছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজের দায়িত্বের প্রতি এভাবে সুবিচার করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই যেন প্রমাণ করে— আসল নায়ক দুর্দিনেই মানুষের মাঝে জন্ম নেন। 

    উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যায় কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে এক বিরাট এলাকা। বৃষ্টি এবং তার জেরে তৈরি হওয়া বন্যায় ভেসে গিয়েছে জনপদ। মানুষ থেকে শুরু করে গবাদিপশু ও বন্যপ্রাণী, সকলেই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। জলের তোড়ে নেমেছে জায়গায় জায়গায় ধস। সেই ধসে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। প্রাণ হারিয়েছে গবাদি পশু থেকে বন্যপ্রাণী। বৃষ্টি আপাতত না হওয়ায় জল নামতে শুরু করলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরু হয়েছে পেটের রোগ-সহ অন্যান্য উপসর্গ। স্থানীয়দের কথায়, রোগ তো বন্যা বা ধসের কথা ভেবে পরে আসবে না! অথচ পথ না থাকায় চিকিৎসকদের পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না সব জায়গায় সময়মতো পৌঁছে যেতে। 

    জানা গিয়েছে, ডাঃ ইব্রাহিম মোল্লা রোগী দেখতে যাওয়ার সময় দেখতে পান সামনে আর পায়ে চলার মতো কোনও রাস্তা নেই। অথচ তাঁকে পৌঁছতেই হবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আর দেরি করেননি সিদ্ধান্ত নিতে। সামনের অগম্য রাস্তা তিনি অতিক্রম করেন দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতেই। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে সকলেই। 

    প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত তথ্য, দুর্যোগে উত্তরবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৩ জনের। ১৮ জন দার্জিলিং-মিরিক-কালিম্পংয়ের এবং নাগরাকাটার পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, 'কালকে যাঁরা বন্যায় মারা গিয়েছেন, ২৩ জন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং প্রতি পরিবারের একজনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরিও দেওয়া হবে, যাতে পরিবারগুলি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়।' একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যদিও আমি জানি, জীবনের বিকল্প কক্ষনও টাকা হয় না। কিন্তু যে চলে যায়, তাঁর পরিবার থেকে যায়। পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য এটা আমাদের সামাজিক কর্তব্য।' 

    উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নাগরাকাটা-মিরিক। তিনি বলেন, 'উত্তরবঙ্গে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১২ ঘণ্টা টানা ৩০০ মিমি বেগে বৃষ্টি হয়েছে, ভূটানের জল, সিকিমের জল এসে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে।' এদিন তিনি প্রশ্ন করেন, বাংলা কতগুলি রাজ্যের জল সামলাবে? তিনি বলেন, 'বিহারে বৃষ্টি হলে জল চলে আসছে ফরাক্কা দিয়ে, উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি হলে জল চলে আসছে ফরাক্কা দিয়ে।' তারপরেই এদিন ফের একহাত নেন ডিভিসি-কে। 
  • Link to this news (আজকাল)