উত্তরবঙ্গে দুর্যোগের পর দু’দিন পার, পাহাড় থেকে সমতলে নামার কোন কোন রাস্তা খুলল, কোন কোন পথ এখনও বন্ধ
আনন্দবাজার | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
দুর্যোগের ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে দার্জিলিং। সোমবার সকাল থেকেই পাহাড়ে নতুন করে আর বৃষ্টি হয়নি। মেঘের আড়াল সরে যাওয়ায় দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘারও। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকেরা পাহাড় থেকে নামতে শুরু করেছেন। ভারী বর্ষণ এবং ধসের কারণে অনেক রাস্তাতেই যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে দ্রুত সংস্কারের কাজ করে বেশ কিছু রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে।
দার্জিলিং থেকে সমতলে নামার জন্য হিল কার্ট রোড এবং পাঙ্খাবাড়ি রোড খোলা থাকার কথা জানানো হয়েছিল সোমবারই। অন্য দিকে, সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিলিগুড়ির সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত ভারী পণ্যবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত এবং বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে যাত্রিবাহী বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। পরবর্তী নির্দেশিকা না-আসা পর্যন্ত আগামী চার সপ্তাহের জন্য এই নির্দেশিকা বলবৎ থাকতে পারে।
পর্যটকদের জন্য হিল কার্ট রোড খোলা রয়েছে, যা তিনধারিয়া হয়ে নেমে যাচ্ছে সুকনার দিকে। তার পরে সেখান থেকে রাস্তা চলে যাচ্ছে শিলিগুড়িতে। এ ছাড়া পাঙ্খাবাড়ি রোডও খোলা রয়েছে। তবে এই রাস্তাটি তুলনামূলক দুর্গম। কার্শিয়াং শহরের কিছুটা আগে থেকে রাস্তাটি নেমে যায় নীচের দিকে। তার পরে দুধিয়ার কিছু দূরে গাড়িধুরায় গিয়ে মেশে রাস্তাটি। সেখান থেকে চলে যায় শিলিগুড়িতে। দার্জিলিঙের বিজনবাড়িতে যে পর্যটকেরা আটকে ছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলকেই পাঙ্খাবাড়ি এবং তিনধারিয়া হয়ে সমতলে নামিয়ে আনা হয়েছে।
রবিবার রোহিণী রোড সাময়িক ভাবে খোলা ছিল। তবে সোমবার সকাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। দুধিয়ায় সেতু ভেঙে যাওয়ায় মিরিকের রাস্তাও আপাতত আংশিক বন্ধ রয়েছে। রাস্তার উপর যে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সোমবার সকালেও সেখানে পৌঁছে যান সেনা জওয়ানেরা। সেখানে সেনার তরফে প্রয়োজনে একটি বেলি ব্রিজ তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে বলে সূত্রের খবর। সিকিম থেকে কালিম্পং-লাভা-লোলেগাঁও হয়ে শিলিগুড়ি নামার রাস্তা খোলা আছে।
গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর তরফে জানানো হয়েছে, মিরিক ব্লকে বেশ কয়েকটি রাস্তার একাংশে মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশেও কাজ চলছে। বিজনবাড়ি ব্লকের প্রায় সব রাস্তাতেই মেরামতির কাজ চলছে। সুখিয়োপোখরিতে সোনাদা থেকে মুনদা যাওয়ার রাস্তা এবং মিলিং রোড যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি রাস্তাগুলিতে কাজ চলছে। গরুবাথান, কালিম্পং এবং লাভা ব্লকের ছোট রাস্তাগুলিতে এখনও মেরামতির কাজ পুরো শেষ হয়নি।
সোমবার সকালে দুধিয়ার কাছে ভেঙে পড়া সেতু পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ। তিনি জানান, দুধিয়ার ভাঙা সেতুর এক প্রান্ত থেকে শিলিগুড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তায় কোনও সমস্যা নেই। তবে সেতু ভেঙে পড়ার কারণে মিরিকের দিকে যাওয়া যাচ্ছে না। মিরিক থেকে ঘুম হয়ে যাতায়াতের রাস্তা খোলা রয়েছে। রোহিণী পয়েন্টে যেখানে ধস নেমেছে, সেখানেও রাস্তাটি বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই বলে জানান তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, “তবে এর জন্য যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে না। আমরা কার্শিয়াং থেকে পাঙ্খাবাড়ি রোড এবং হিল কার্ট রোড ব্যবহার করে লোকেদের পাঠাচ্ছি।”