• দড়িতে ঝুলে বিপন্নদের পাশে, খাদ পেরিয়ে গ্রামান্তরে ডাক্তার ইরফান মোল্লা
    প্রতিদিন | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: জলের তোড়ে মুছে গিয়েছে রাস্তা। নিচে হাঁ হয়ে আছে প্রাণঘাতী খাদ। জলে ডুবে থাকা গ্রামে ঘরে ঘরে পেটখারাপ-জ্বর। ডাক্তার কই? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দড়িতে ঝুলে পাশের গ্রামে যাচ্ছেন চিকিৎসক ইরফান মোল্লা! সোমবার উত্তরবঙ্গের এই ভিডিও ভাইরাল। আলোর থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়েছে তা।

    রাজ্যের সরকারপন্থী চিকিৎসক-স্বাস্থ‌্যকর্মীদের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ‌্যাসোসিয়েশনের সদস‌্য ডা. মহম্মদ ইরফান মোল্লা। জলপাইগুড়ির নাগরকাটা ব্লকের ব্লক স্বাস্থ‌্য আধিকারিকের পদে রয়েছেন তিনি। রবিবার ভোররাত থেকেই ভয়ঙ্কর বৃষ্টিতে ভয়াল পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গের। কোথাও ভেঙে গিয়েছে ব্রিজ। ফুঁসছে নদী। জলের তোড়ে বাড়িঘর-দোর ভেসে গিয়েছে। পানীয় জলে মিশেছে বন‌্যার জল। ঘরে ঘরে পেট খারাপ-আন্ত্রিক। সে খবর পৌঁছয় ডা. মহম্মদ ইরফান মোল্লার কাছেও। মৃত‌্যুভয় তুচ্ছ করে বেরিয়ে পড়েন তিনি।

    বামনডাঙা এলাকায় ধ্বস নেমে মুছে গিয়েছে রাস্তা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর কাজে নামে। ওপারে যেতে হবে। মহম্মদ ইরফানের একথা শুনে অবাক এনডিআরএফ কর্মীরা। যাওগে ক‌্যায়সে! রাস্তাই তো নেই। উত্তরে মহম্মদ ইরফান জানান, ‘‘যেতে হবেই। যে করে হোক।’’ এরপরেই সেই ছবি। দু’প্রান্তে দড়ি বেঁধে ‘রিভার ক্রসিং’ পদ্ধতিতে এগিয়ে চলেছেন অকুতোভয় চিকিৎসক। এই ছবিই বলে দিচ্ছে, চিকিৎসাজনিত সাহায‌্য দিতে বন‌্যাবিধ্বস্ত এলাকায় নেমে পড়েছে প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ‌্যাসোসিয়েশনও। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে একশো মানুষ সমান খাদের গর্ত পেরিয়ে ‘রিভার ক্রসিং’ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে যাচ্ছেন অকুতোভয় এক ডাক্তার।

    ঘরে বসে বিরোধীদের সিংহভাগ যখন ফেসবুকে সমালোচনায় ব‌্যস্ত, তখন প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ‌্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসক মৃত‌্যুভয়কে হারিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রামের পর গ্রামে। সোশাল মিডিয়ায় এই ভিডিও শেয়ার করে প্রশংসা জানিয়েছেন তৃণমূল রাজ‌্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কেন্দ্রের শাসক দল হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের রাজনীতিতে ব‌্যস্ত। তেমন সময় মহম্মদ ইরফান মোল্লার এই ছবি দেখে কুর্নিশ জানিয়েছেন বিরোধীদের কেউ কেউ। সে তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ।

    সমাজমাধ‌্যমে এই ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাকে প্রণাম জানাই ডাক্তারবাবু।’’ প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ‌্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘এই দুর্যোগের দিনে আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হাজারো মানুষ আজ দুঃখকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁরা নিঃস্ব। অনিশ্চিত ভবিষ‌্যতের মুখোমুখি। এই কঠিন সময়ে সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো। সহযোগিতার হাত বাড়ানো।’’ ডা. পূজা মৈত্র জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের বহু জনপ্রতিনিধি কেন্দ্রীয় সরকারি শাসকদলের। আজ তাঁরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও সিংহভাগের টিকির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ মুখ‌্যমন্ত্রী আর তাঁর সৈনিকরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দিচ্ছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)