মালদহে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু কংগ্রেস কর্মীর, আশঙ্কাজনক আরও চারজন, দলের কর্মীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ স্ত্রীর
আজকাল | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গভীর রাতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা আইনজীবী এবং কংগ্রেস কর্মী নরেন্দ্রনাথ সাহার (৪৫)। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চারজন। সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত কনুয়া ভবানীপুর এলাকায়। দুর্ঘটনার পর এলাকাজুড়ে ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক। ঘটনায় দলেরই এক কর্মীর দিকে আঙুল তুলেছেন নিহতের স্ত্রী। তাঁর দাবি, পুরনো শত্রুতা এবং রাজনৈতিক রেষারেষির জেরে পরিকল্পিত ভাবে গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে ওই নরেন্দ্রনাথকে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার রাতের দিকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাঁচজন। সেই সময় দ্রুত গতিতে আসা একটি স্করপিও গাড়িটি সজোরে তাঁদের গিয়ে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নরেন্দ্রনাথ। শেখর সাহা, শশাঙ্ক সাহা, মনোজ কুমার দাস এবং পুলক সাহা নামে চার জন আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যান চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শেখরকে স্থানান্তর করা হয় শিলিগুড়িতে এবং শশাঙ্ককে রায়গঞ্জের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। বাকি দু’জনের মধ্যে একজনকে মালদহ মেডিকেল কলেজে এবং অপরজন রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। পুলিশ মৃতদেহটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় এবং ঘাতক গাড়িটিকে আটক করে তদন্ত শুরু করে।
এদিকে, এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে সামনে আসছে নতুন তথ্য। মৃত নরেন্দ্রনাথের স্ত্রী মঞ্জু সাহা দাবি করেছেন, এটি কোনও সাদামাটা দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি ‘পরিকল্পিত খুন’। তাঁর অভিযোগ, স্বামীকে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঞ্জুর অভিযোগের তির এলাকার এক বাসিন্দা বিপদ প্রামাণিকের দিকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নরেন্দ্রনাথ ও বিপদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একাধিকবার তাঁদের মধ্যে বচসা ও সংঘর্ষ হয়েছে। যদিও দু’জনেই কংগ্রেসের কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, ঘটনাটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক রেষারেষিও জড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ, আহতদের মধ্যে শেখর ও শশাঙ্ক দু’জনেই স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত। ফলে এই ঘটনায় দলীয় প্রতিহিংসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সূত্রের খবর, ঘটনার পর বিপদ প্রামাণিক হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত বিষয়টি সরকারিভাবে নিশ্চিত করেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে কোনও ত্রুটি রাখা হবে না, বলেই আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হরিশ্চন্দ্রপুর জুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য। রাজনৈতিক মহল, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।