আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়ার পরেই স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েন গেরুয়া শিবিরের সাংসদ ও বিধায়ক। প্রথমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও তাঁদের সেই প্রয়াস কাজে আসেনি। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে। মারমুখী হয়ে ওঠেন বিক্ষোভকারীরা। এমনকী তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শঙ্কর ঘোষকে জুতো নিয়ে তেড়ে যান বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে দুই নেতাই গাড়িতে উঠে পড়েন। কিন্তু জনতার ক্ষোভ তাতেও প্রশমিত হয়নি। তাঁদের বলতে শোনা যায়, সারাবছর না এসে এখন কেন এসেছেন? সেইসঙ্গে তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে উড়ে আসতে থাকে ইট ও পাথর। দুই নেতার সঙ্গের দেহরক্ষীরা আটকানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ইট লাগে খগেন মুর্মুর। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তাঁর গভীর চোট রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, সোমবারের পর মঙ্গলবার, ফের স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও। সোমবার নিজের বিধানসভা এলাকায় গিয়ে সাধারণের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মঙ্গলবার। কুমারগঞ্জের বিধায়ক মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেলে, ফের সাধারণের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বিধায়ককে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয়। কিছুক্ষণেই উত্তপ্ত হয় এলাকার পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বারবার বিজেপি নেতারা বিক্ষোভের মুখে পড়ায়, ঘটনায় তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, এই বিক্ষোভ স্রেফ সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সোমবার খগেন মুর্মু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, মঙ্গলবার, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হাসপাতালে গিয়ে দেখা করলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর সঙ্গে।
বিজেপি সাংসদের সঙ্গে দেখা করার পর, হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, খগেন মুর্মু চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। বিজেপি সাংসদের ডায়বেটিস প্রসঙ্গেও এদিন জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে তিনি খগেন মুর্মুর সঙ্গেও কথা বলেন, তাঁকে বলেছেন, 'তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।'
মঙ্গলবার বন্যা পরস্থিতি পর্যবেক্ষণে মিরিকের দুধিয়ায় গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ১৫ দিনের মধ্যে মিরিকের দুধিয়ায় সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, প্রথমে আধিকারিক জানিয়েছিলেন এক মাস সময় লাগবে সেতু তৈরিতে। পরে স্থির হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যেই এটি তৈরি করা হবে। তাঁর আরও আশ্বাস, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাড়ি, রাস্তা সব তৈরি করে দেওয়া হবে। এদিন মৃতদের পরিবারের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের চেকও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার বন্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন মমতা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা। গতকালই ঘোষণা করেছিলেন মঙ্গলবার মিরিকে যাবেন। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মিরিকের দুধিয়া পৌঁছন মমতা। শনিবার রাতভর বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস নামে। প্রবল বৃষ্টিতে মিরিকের দুধিয়া সেতুটি ভেঙে যায়। এর পর থেকেই সমতলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ দিন মিরিকে পৌঁছে দুর্গত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই প্রতিশ্রুতি মতো মৃতদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, মৃতদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।