আজকাল ওয়েবডেস্ক: শৈলশহর দার্জিলিঙের সৌন্দর্যে ফের লাগল আবিলতার দাগ। এ বার একদল পর্যটকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাস্তায় ব্যবহৃত নোংরা ডায়াপার ছুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠল। ঘটনার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বচসায় জড়ান ওই পর্যটকেরা। গোটা পর্বটি ক্যামেরাবন্দি হতেই তা নেটমাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। পর্যটকদের এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নেটিজেনরা৷ পাশাপাশি প্রতিবাদী যুবকের সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।
ঘটনাটি দার্জিলিঙের এক মনোরম ভিউপয়েন্টের। জানা গিয়েছে, বিহারের নম্বরপ্লেট লাগানো একটি গাড়ি সেখানে এসে দাঁড়ায়। গাড়িতে একটি পরিবার ছিল। হঠাৎই গাড়ির জানলা দিয়ে একটি শিশুর ব্যবহৃত নোংরা ডায়াপার বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়। সেই সময় পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন স্থানীয় এক যুবক। বিষয়টি তাঁর নজরে আসতেই তিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করেন এবং পর্যটকদের গাড়ির দিকে এগিয়ে যান।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ওই যুবক অত্যন্ত শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে পর্যটকদের বলছেন, "আপনারা এখানে ডায়াপার ফেলেছেন, ওটা তুলে নিন।" তাঁর কথা শুনে গাড়ির চালক প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। পরে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, "এখানে তো এমনিতেই নোংরা হয়ে আছে।" এই যুক্তি শুনে মেজাজ হারাননি ওই যুবক। তিনি পালটা বলেন, "সেটা ছাড়ুন। আমরা এই জায়গা অনেক কষ্ট করে পরিষ্কার রাখি। দয়া করে ডায়াপারটা তুলে নিন।" এরপর পর্যটকদের মধ্যে থেকে একজন গাড়ি থেকে নেমে এসে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই নোংরা আবর্জনা তুলে নেন। এরপরেই গাড়ির নম্বরপ্লেটের দিকে তাকিয়ে যুবকটি বলেন, "আপনারা কোথা থেকে আসছেন? ওহ্, বিহার থেকে।" তিনি যোগ করেন, "দয়া করে এমন কাজ করবেন না। অন্যেরা নোংরা ফেলেছে বলে কি আপনারাও ফেলবেন?"
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। পর্যটকদের আচরণে অনুশোচনার লেশমাত্র ছিল না। গাড়ির চালক উল্টে প্রতিবাদী যুবককে কটাক্ষ করে বলেন, "বেশ করেছেন, যান ভিডিও পোস্ট করে দিন গিয়ে।" এই মন্তব্যের পরেই ওই যুবককে বলতে শোনা যায়, "দেখুন, বিহারের মানুষেরা ঠিক এইরকমই। বাচ্চার ডায়াপার ডাস্টবিনে ফেলার বদলে বাইরে রাস্তায় ফেলছে।"
ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। পর্যটকদের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মানসিকতা এবং ঔদ্ধত্য দেখে ক্ষুব্ধ হন নেটিজেনরা। এক রেডিট ব্যবহারকারী লেখেন, "বাকিরাও তো ফেলেছে - এই যুক্তিটাই দেখিয়ে দেয় সমস্যাটা ঠিক কোথায়। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের ভুলকে সঠিক প্রমাণ করার এই প্রবণতাই আমাদের সমাজের মূল ব্যাধি। যুক্তি দিয়ে ভাবার বদলে আমরা গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিই।" আর এক জন লেখেন, "এই ঘটনা আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি।"
তবে অধিকাংশ মানুষই দার্জিলিঙের ওই যুবকের ভূমিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একজন মন্তব্য করেছেন, "এই ধরনের মানুষদের নাম প্রকাশ্যে এনে লজ্জিত করা উচিত।" অনেকে আবার তাঁকে 'স্বচ্ছ ভারতের প্রকৃত সৈনিক' আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, তাঁর মতো নাগরিকেরাই দেশের আসল সম্পদ। এই একটি ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব শুধু স্থানীয় প্রশাসন বা সাফাইকর্মীদের নয়, সেখানে ঘুরতে যাওয়া প্রতিটি মানুষেরও।