অভিরূপ দাস: পঞ্চাশ লক্ষ টাকার নতুন যন্ত্র বসেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। তাতেই সম্ভব হল মালাবদল! গল্প নয় সত্যি! কৈশোরের নাছোড়বান্দা ব্রণ থেকে মুখে অসংখ্য দাগ। সে দাগের কারণে বহুবার নাকচ করেছে পাত্রপক্ষ। বাঁকুড়ার কেঠারডাঙা এলাকার বাসিন্দা প্রিয়া দাশের সমস্যার সমাধান করল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ। ত্বকরোগ বিভাগে বিনামূল্যে লেজার মেশিনের সাহায্যে মুছে দেওয়া হল মুখের দাগ।
বেসরকারি হাসপাতালে এই দাগ তুলতে একাধিক সিটিং করতে হয়। এক-একটি সিটিংয়ে খরচ দশ হাজার টাকা। মাঠে কাজ করে মৃন্ময়ীর পরিবারের সে টাকা জোগাড় অসম্ভব! দু’টাকার টিকিটেই সরকারি হাসপাতালের ত্বকরোগ বিভাগে মুশকিল আসান। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ত্বকরোগ বিভাগের সহায়তায় গত ছ’মাসে বারো জন প্রান্তিক পরিবারের যুবক-যুবতী চাকরিও পেয়েছেন। কোন উপায়ে?
সাধারণত গলার উপর বা মুখের আশপাশে ট্যাটু করলে চাকরি মেলে না সেনাবাহিনীতে। বিমান সেবিকার চাকরিও নামঞ্জুর হয়ে যায়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ত্বকরোগ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. অভিষেক দে জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলে মেলায় ট্যাটু তৈরি করার পসরা বসে। কৈশোরে ঝোঁকের বশে অনেকেই ট্যাটু করিয়েছেন গলায়, হাতের তালুর পিছনে। এবার কলেজ শেষ করে তারা বিপাকে। অনেককেই বিমানসেবিকার চাকরির ইন্টারভিউতে শুনতে হয়েছে, ‘‘এই ট্যাটু সরিয়ে এসো।’’
এদিকে প্রান্তিক পরিবারের সেই সব মেয়েরা পড়েছেন বিপাকে। বেসরকারি ক্লিনিকে ট্যাটু তোলার ক্ষমতা নেই তাঁদের। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অত্যাধুনিক লেজার মেশিনের মাধ্যমে তোলা হয়েছে ট্যাটু। লেজার রশ্মি ট্যাটুর কণাগুলোর মধ্যে ফোকাস করে। সেই তাপে ইঙ্কের কণাগুলো ছোট ছোট টুকরোয় পরিণত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই কণাগুলো মুছে ফেলা হয়।
দু’দশক আগেও সরকারি হাসপাতালের ত্বকরোগ বিভাগ বলতে ছিল ছোট্ট একটা এক চিলতে ঘর। এখন তা আক্ষরিক অর্থেই মাল্টিস্পেশালিটি। নতুন করে তৈরি হয়েছে ওপিডি। সেখানে হচ্ছে ত্বকের মাইনর ওটি থেকে মেজর ওটি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ত্বকরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. অভিষেক দে-র কথায়, আমাদের হাসপাতালে এই মুহূর্তে ৯ জন এমডি স্টুডেন্ট আছেন। ত্বকরোগ বিভাগে চারজন সিনিয়র রেসিডেন্ট রয়েছেন। ফি দিন ছ’শো রোগী আসেন ত্বকরোগ বিভাগে।
৩টে লেজার মেশিন রয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে মেয়েদের মুখের অবাঞ্ছিত লোমও মুছে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। শ্বেতির অত্যাধুনিক চিকিৎসাও শুরু হয়েছে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে।