বরানগরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ‘খুনে’ জালে আরও ৩, সোনার হদিশ পেতে মরিয়া পুলিশ
প্রতিদিন | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাকপুর: বরানগরে সোনার দোকানে ডাকাতি করে ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় পুলিশের জালে আরও তিনজন। তাদের মধ্যে একজন ডাকাতির সোনা কিনেছিল। বাকি দু’জন ষাটোর্ধ ব্যবসায়ী শঙ্কর জানাকে খুন করেছিল বলে খবর। ধৃত ‘গোল্ড রিসিভার’ পাঁচু সামন্তকে মঙ্গলবার বারাকপুর আদালতে পেশ করা হয়েছিল। তাকে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাকি দু’জনকে ধরা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে। বুধবার তাদের বারাকপুর আদালতে পেশ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতির আগেই বরানগরের ঘোষপাড়ার সোনার ব্যবসায়ী পাচুর কাছে সোনা বিক্রির কথা সেরে ফেলেছিল সঞ্জয়। আগাম পরিকল্পনা মাফিক ডাকাতির পরপরই ১৫ কেজির মধ্যে বেশিরভাগ সোনা পাঁচুর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা জেনেছেন, সোনা বিক্রির কয়েক কোটি টাকা একসঙ্গে নিতে চায়নি সঞ্জয়। সেই মতো পাঁচু ওই সোনার গয়না নিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছিল। অন্যদিকে, জামসেদপুর থেকে যে দু’জনকে পুলিশ পাকড়াও করেছে, তারাই শঙ্করবাবুকে লোহার দণ্ড দিয়ে পিটিয়ে খুন করেছিল বলেই অভিযোগ। আরও একজন হামলা চালিয়েছিল। তার খোঁজে বিহার-ঝাড়খণ্ডে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। এই তিনজনের কাছেও ডাকাতির সোনা রয়েছে বলেই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলিধর শর্মা বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। ধৃতদের বয়ান যাচাই করা হচ্ছে। লুটের সোনা খুব দ্রুত উদ্ধার হবে বলেই আশাবাদী।” প্রসঙ্গত, একটি অভিযোগে প্রতারণার পরোয়ানার ভিত্তিতে আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল সঞ্জয় মাইতি। জেলে গিয়ে তার পরিচয় হয় রাকেশ দাসের সঙ্গে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের ব্যবসায়ী দীপক দাসকে গুলি করে খুন করেছিল সে। বিহার থেকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা রাকেশ ও তার একসঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেন। সঞ্জয় ও রাকেশ জেলে বসে বরানগর শম্ভুনাথ দাস লেনের সোনাপট্টির ৯ নম্বর দোকান সরস্বতী চেন অ্যান্ড অর্নামেন্টসে ডাকাতির ছক কষে। যেহেতু বিহার ও ঝাড়খণ্ডের অপরাধী মহলে রাকেশের নেটওয়ার্ক খুবই ভালো, তাই সেখানের তিন ডাকাতকে সংগঠিত করে রাকেশ। তারা কলকাতায় এসে সঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এছাড়াও সঞ্জয় পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙার সুরজিৎ শিকদারকেও নিজের গ্যাংয়ে সামিল করে। সিসিটিভির ফুটেজ ও মোবাইলের সূত্র ধরেই প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় এই দু’জনে। এরপরই পুলিশের জালে ধরা পড়ল আরও তিনজন। জেলবন্দি খুনের অভিযুক্ত রাকেশ দাসকেও নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পুলিশ। ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানতে সঞ্জয় ও পাঁচুকে পৃথক জেরার পাশাপাশি একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা। কোনওভাবে পাঁচু এই ডাকাতির কেস আগে থেকে জানত কিনা, খুন হওয়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কখনও তাঁর কোনও ব্যবসায়িক লেনদেন বা ঝামেলা কখনও হয়েছিল কিনা, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।