ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বিপর্যয়ে লন্ডভন্ড রাজ্যের সবচেয়ে বড় চা বাগান। প্রায় ১৬০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে নাগরাকাটার চ্যাংমারি চা বাগান। এটি শুধু রাজ্যে বৃহত্তম চা বাগান নয়, গোটা এশিয়ার মধ্যে এতবড় বাগান খুব কমই রয়েছে। কিন্তু ডায়না নদীর জলের তোড়ে চরম ক্ষতির মুখে সেই বাগান। প্রায় ৫০ হাজার চা গাছ কার্যত নিশ্চিহ্ন। ভেঙে পড়েছে বাগানের দু’শোরও বেশি শেড ট্রি। সবমিলিয়ে বাগানের তিনশো হেক্টর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত বাগানের ১২টি কালভার্ট। দু’টি ফ্যাক্টরিতে জল ঢুকে সিটিসি ও গ্রিন টি মিলিয়ে ভেসে গিয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কেজি তৈরি চা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমিকদের বসবাসের ঘর। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা বলে দাবি বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার দেবজিৎ দে’র।
বাগানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। চরম অনিশ্চয়তার মুখে তাঁদের ভবিষ্যৎ। বাগান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সবটাই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে শুধু চ্যাংমারি চা বাগান নয়, নাগরাকাটার একাধিক চা বাগান কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। এখনও জলের তলায় বামনডাঙা টন্ডু চা বাগান। ডায়না, জলঢাকা ও গাঠিয়া নদীর জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বাগানের শ্রমিকদের ঘর। ফলে কোনওমতে তাঁরা বাগানের ফ্যাক্টরিতে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। এই বাগানটিরও ভবিষ্যৎ ঘিরে উঠছে প্রশ্ন। ভুটানের জলে ক্ষতির মুখে পড়েছে মোরাঘাট চা বাগান। আলিপুরদুয়ারে সুভাষিণী চা বাগানও সংকটের মুখে। এই বাগানের প্রায় ৯০ হেক্টরে ভুটানের জলের সঙ্গে ডলোমাইট এসে জমা হয়েছে। ফলে ওই জমিতে আর চা গাছ হওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রামঅবতার শর্মার। কোচবিহারে কুচলিবাড়ি টি এস্টেট ও মেখলিগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৈনাক হিল চা বাগান। মঙ্গলবার চা বাগান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, বিপর্যয়ের জেরে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার মিলিয়ে ৫০টিরও বেশি চা বাগান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি টাকা। সোমবার অবশ্য নাগরাকাটা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, চা শিল্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পদক্ষেপ করবে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় খুশি চা বাগান মালিকরা। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের সম্পাদক সুমিত ঘোষ বলেন, ডুয়ার্সে আমাদের সংগঠনভুক্ত সাতটি চা বাগান একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ারের মেচপাড়া, জলপাইগুড়ির চ্যাংমারি, কুর্তি, নাগরাকাটা, মোরাঘাট, রিয়াবাড়ি ও কলাবাড়ি টি এস্টেট, সবক’টিরই অবস্থা খুব খারাপ। রামঅবতার শর্মা বলেন, আমাদের কাছে হিসেব পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স মিলিয়ে ৩২টি চা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিজস্ব চিত্র