• দার্জিলিং-সিকিম-বক্সার পথে পর্যটকরা, খুলল টাইগার হিল, ছন্দে ফিরছে পাহাড়-ডুয়ার্স
    বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: আকাশ পরিষ্কার। সকালে রোদের দেখা মিলেছে। দৃশ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘা। খুলে গেল টাইগার হিল। শুরু টয়ট্রেনের জয় রাইডও। দুর্যোগের মেঘ কাটতে না কাটতে ফের পর্যটনে ফিরছে পাহাড় ও ডুয়ার্স। পাঙ্খাবাড়ি, তিনধারিয়া হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা খোলা। লাভা হয়ে যাওয়া যাচ্ছে কালিম্পং এবং গ্যাংটকে। বেড়ানোর আগ্রহে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে উত্তর সিকিমের লাচুং ও জিরো পয়েন্টে তুষারপাত।

    বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত মিরিক, বিজনবাড়ি ও সুখিয়াপোখরিকে আপাতত বাদ রেখে পাহাড়ে পর্যটকরা বেছে নিচ্ছেন তাঁদের পছন্দের ডেস্টিনেশন। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাহাড়ে চিমনি, সিটং, দাওয়াইপানি, তাকদা-তিনচুলের পাশাপাশি গোরুবাথান, লাভা, ঝান্ডি, পাশাবং, রিসপ, কোলাখাম, ডাবলিং, আলগারা, কাফেরগাঁও, পানবু, সামসিং, চুইখিম, পেডং, রামধুরা, তোদে তাংটা—সর্বত্রই বুকিং হচ্ছে পুরোদমে। এমনকি আতঙ্কিত হয়ে যাঁরা হোটেল-রিসর্ট, হোম স্টে’র বুকিং বাতিলের জন্য ঘন ঘন ফোন করছিলেন, অনেকেই এখন খানিক স্বস্তিতে। অনেকেই উত্তরবঙ্গে বেড়াতে আসার প্ল্যান বাতিল না করে বরং পাহাড়-ডুয়ার্সের বিকল্প ‘নিরাপদ’ জায়গা বেছে নিচ্ছেন। বিপর্যয়ের জেরে টাইগার হিল, রক গার্ডেনে পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। তা চালু হয়ে গিয়েছে। আজ, বুধবার থেকে সিঙ্গালিলা ট্রেকিং রুটে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলবে বলে খবর। এই রুটের আকর্ষণ সান্দাকফু।

    উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি জানিয়েছেন, জঙ্গলের ভিতরে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠের সেতু ও পর্যটকদের যাতায়াতের রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। জলদাপাড়ায় জেপি ওয়াচ টাওয়ার যাওয়ার পথে কাঠের সেতু ভেঙে গিয়েছে। জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে যাওয়ার রাস্তায় হলং নদীর উপর কাঠের সেতুটিও নিশ্চিহ্ন। দ্রুত সেগুলি মেরামত করে জলদাপাড়ায় হাতি ও কার সাফারি চালু করা হবে। গোরুমারায় মেদলা ছাড়া বাকি ওয়াচ টাওয়ারগুলিতে কার সাফারি চালু রয়েছে। জল নামলে মেদলাতেও পর্যটকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হবে। বক্সা, জয়ন্তীতে সাফারি চালু। চিলাপাতাতেও শীঘ্র সাফারি চালু হবে। তার আগে এখন জঙ্গলে ‘স্ক্যান’ চলছে। এদিন পর্যন্ত ডুয়ার্সের জঙ্গলের ভিতর কোনও বন্যপ্রাণীর আটকে থাকার খবর নেই। দেহও উদ্ধারও হয়নি।

    অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, ‘বিপর্যয়ের জেরে পাহাড়ে মিরিক, বিজনবাড়ি, সুখিয়াপোখরির পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারে শিসামারা নদীর ধারে হোম স্টেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তর সিকিম ও দার্জিলিং পাহাড়ের কয়েকটি জায়গা বাদ দিয়ে সর্বত্রই পর্যটকদের যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দীপাবলি পর্যন্ত পাহাড়-ডুয়ার্সের কম ঝুঁকিপূর্ণ অফবিট ডেস্টিনেশনগুলিতে ভালোই বুকিং রয়েছে।’ হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘অনেক পর্যটক বাস্তব ছবিটা না জেনে অযথা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। পাহাড়ে কয়েকটি রুট বাদ দিয়ে বাকি সব রাস্তা আপাতত খোলা।’ তাঁর দাবি, মিরিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কার্শিয়াংয়ের কাছে চিমনি এবং সিটংয়ে পর্যটকরা রয়েছেন। এদিনও সিটংয়ে কলকাতা থেকে ট্যুরিস্ট এসেছেন। কার্শিয়াংয়ের ডাউহিল হয়ে, রংটং-শিবখোলা হয়ে কিংবা দিলারাম দিয়ে সিটংয়ে পৌঁছনো যায়। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

    মঙ্গলবার এনজেপি স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে অনেক পর্যটক দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমে গিয়েছেন। ডুয়ার্স ভ্রমণ বাতিল করে সিকিম বেছে নিয়েছেন তাঁদের অনেকে। এনজেপি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উদয় সাহা বলেন, গত দু’দিন ব্যবসা খারাপ গিয়েছে। অনেকে দার্জিলিংয়ের বুকিং বাতিল করেছিলেন। এদিন থেকে সব ফের স্বাভাবিক। এদিন আরও একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলবাজারের বাসিন্দা উপেন্দ্রকুমার রামের (২৮) দেহ ভেসে গিয়েছিল রঙ্গিত নদীতে। সবমিলিয়ে বিপর্যয়ে মৃত্যুর সংখা বেড়ে হল ৩৭। এছাড়া সোমবার রাতে সুখিয়াপোখরির তাবাকোশি থেকে প্রায় ৭০ জন পর্যটককে নামিয়ে আনা হয় সমতলে। ইন্দ্রাণী জলপ্রপাতের কাছে হোমস্টেতে আটকে পড়া চারজন এবং বিজনবাড়ির চামুন্টি চা বাগানের বাংলো থেকে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)