এক মাস ত্রাণ বিলির নির্দেশ মমতার, নিলেন ছাত্রীর পড়ার দায়িত্বও
বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
সুব্রত ধর, দুধিয়া (কার্শিয়াং): প্রবল বৃষ্টি, নদীখাত ধরে নেমে আসা প্রবল জলরাশি আর ভূমিধস নিমেষে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে ঘর-বাড়ি, ব্রিজ। কেউ ভেসে গিয়েছেন। ধসের নীচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই বহু পরিবারের। তাদের সহায় এখন সরকারি ত্রাণ শিবির। এই পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে একমাস ত্রাণ শিবির চালানোর নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গতদের ত্রাণ বিলিরও কাজ চলবে এই সময় ধরে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ শিবিরে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রশাসন সবরকম সহযোগিতা করবে।
মঙ্গলবার মিরিকের কাছে দুধিয়ায় প্রশাসনিক ক্যাম্পে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিপর্যয়ে স্বজনহারা মানুষগুলো শেষ ভরসা হিসেবে তাঁর দিকেই তাকিয়ে। সুখিয়াপোখরির কঞ্জু ডুকপাও ছিল ভিড়ে। বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাবা-মাকে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ দশম শ্রেণির ছাত্রীকে কাছে টেনে নেন মমতা। স্নেহের হাত মাথায় রেখে কঞ্জুর হাতে তুলে দেন দশ লক্ষ টাকার চেক। সঙ্গে প্রতিশ্রুতি, কঞ্জুর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। সরকার তাকে সবরকম সহযোগিতা করবে। করা হবে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। স্বজনহারা আরও ১৬ জনের হাতেও এদিন মুখ্যমন্ত্রী আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দিয়েছেন।
দশাইন উৎসব উপলক্ষ্যে সপরিবারে মিরিক বস্তিতে মামার বাড়ি গিয়েছিল কঞ্জু। তার বাবা সিআরপিএফ জওয়ান ছিলেন। এদিন দুধিয়ার ক্যাম্পে বসে কঞ্জুর মাসি সুনীতা ছেত্রী বলেন, ‘দশাইন উৎসবের জন্য বাবা ও মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে ছিল কঞ্জু। ধসে চাপা পড়ে তার বাবা-মা’র মৃত্যু হয়েছে। আমি ছাড়া এখন কঞ্জুর আর কেউ নেই।’
দুধিয়ায় ক্যাম্পের একেবারে প্রথম সারির প্রথম চেয়ারে বসেছিলেন নীলু ছেত্রী। কপালে আঘাতের চিহ্ন দেখেই তাঁর কাছে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান, কীভাবে আঘাত লেগেছে? ওই মহিলা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘চোখের সামনে ধসে চাপা পড়ে যায় ছেলে। তাকে বাঁচাতে পারিনি। আমিও চাপা পড়েছিলাম। পুলিশকর্মীরাই উদ্ধার করেছেন।’ সন্তান হারানো মাকে সান্ত্বনা দিয়ে হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মমতা। বিপর্যয়ে প্রাণ হারানো প্রত্যেকের পরিবারের এক সদস্যকে রাজ্য পুলিশে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার কথাও তিনি ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই চাকরির জন্য কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড মানার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে জেলা পুলিশকে জানালেই ১৫ দিনের মধ্যে মিলবে চাকরি। কেউ কম পড়াশোনা করলে বা স্কুলে না গিয়ে থাকলেও এই চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন। বিভিন্ন জেলার পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিহতদের পরিবারের কাছ থেকে এই আবেদনপত্র নেবে। কাউকেই এর জন্য আলাদা করে বিভিন্ন দপ্তর ঘুরতে হবে না। দুধিয়াতে দাঁড়িয়েই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে এই নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।