• খগেনকে দেখতে হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী, আজ আসছেন শাহ
    বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দুর্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে রাজনীতি! দুর্গত এলাকায় গিয়ে জনরোষে আক্রান্ত হওয়া বিজেপি এমপি খগেন মুর্মু, সেই ইস্যুতে সরাসরি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তোপ এবং পালটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ। তার জের চলল মঙ্গলবারও। বিজেপি-তৃণমূল টানাপোড়েনের মধ্যেও কিন্তু প্রশাসনিক প্রধানের কর্তব্য পালন করে মাটিগাড়ার বেসরকারি হাসপাতালে জখম খগেন মুর্মুকে দেখতে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংসদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার খোঁজ নিলেন। আশ্বাস দিলেন সব রকম সহযোগিতারও। যদিও বিষয়টি দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর প্রান্তে আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। এদিনই বিজেপি সাংসদের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। আর আজ, বুধবার শিলিগুড়ি আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 

    প্রকৃতির রোষে জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে। সোমবার সংশ্লিষ্ট ব্লকের সুলকাপাড়া পরিদর্শনে গিয়েই আক্রান্ত হন খগেন এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেখান থেকে ফিরেই মাটিগাড়ার হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন সাংসদ। এদিন দুধিয়া থেকে ফেরার পথে তাঁকে দেখতে সেখানে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব সহ অন্যরা ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, খগেন মুর্মুর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর পুত্রকে ডেকে মমতা জিজ্ঞাস করেন, ‘ওঁর কি ডায়াবেটিস রয়েছে? ওষুধ খান বা ইনসুলিন নেন?’ এরপর সাংসদকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলারই পরামর্শ দেন মমতা। পরিবারের সদস্যদের জানান, অন্যত্র চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে তাঁকে জানাতে পারেন। যে কোনও প্রয়োজনে তিনি পাশে রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমনি ঠিকই আছেন। যাঁদের ডায়াবেটিস থাকে, একটু বেশি পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। সাংসদের কানে একটু লেগেছে। চিকিৎসকদের রিপোর্ট দেখেছি। তিনি এখন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছি।’

    তৃণমূল কোনওরকম হিংসাকে সমর্থন করে না—এই বার্তা দল এবং মুখ্যমন্ত্রী, দু’তরফে দেওয়া হলেও বিজেপি ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে সর্বত্রই ‘হাওয়া গরম’ করছে বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। সেখানে মোদি সরাসরি রাজ্যকে আক্রমণ করে আইন-শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। মণিপুরের প্রসঙ্গ টেনে তার জবাব দিয়েছেন মমতাও। এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছে লোকসভাও। সাংসদের উপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘রিপোর্ট’ তলব করেছে তারা। তিনদিনের মধ্যে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে হবে। এরই মধ্যে এদিন বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন এবং খগেন মুর্মুর সঙ্গে দেখা করতে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। দার্জিলিংয়ে বর্ষণ-ধসে বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকা এদিন ঘুরে দেখেছেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ রাজু বিস্তা সহ বিজেপির নেতারা। বাগডোগরা বিমানবন্দরে তিনি বলেছেন, ‘সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ছাব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে এই ঘটনার বদলা নিতে হবে।’ বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশও হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি করেছেন। আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেসও। এদিন কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গ ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। এটাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)