• ছদ্মবেশী পুলিশের জালে আরও এক সোনা দোকানের ম্যানেজার
    বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ক্রেতার ছদ্মবেশে দাসপুর থেকে আরও এক সোনার দোকানের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম সুশান্ত মাজি। ধৃত দাসপুর থানার গোপীগঞ্জ এলাকার একটি সোনার দোকানের ম্যানেজার। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ তাকে পাকড়াও করা হয়। ওইদিন বিকেলে দাসপুরের খুকুরদহ থেকে একটি সোনার দোকানের মালিক দেবাশিস সামন্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। দু’জনেই চোরাই সোনা কেনার ঘটনায় অভিযুক্ত। মঙ্গলবার তাদের পূর্ব মেদিনীপুরে আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন।

    সোমবার তমলুক থানার পুলিশের দু’টি টিম দাসপুরে রওনা দিয়েছিল। একটি টিম সাদা পোশাকে প্রথমে খুকুরদহে পৌঁছয়। রিসেপশন পেরিয়ে দোকানের ভিতরে যাওয়ার সময় প্রত্যেক ক্রেতার জন্য ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবস্থা করেছিল ওই দোকানদার। অন্যদের মতো পুলিশ কর্মীদেরও ঠান্ডা পানীয় দেওয়া হয়। সন্দেহ এড়াতে তাঁরাও সেই পানীয় খেয়ে দোকানের ভিতরে ঢোকেন। দোকানের ভিতরে কর্ণধার দেবাশিস সামন্ত আছে কি না, সেটা যাচাই করতে ওই টিম সাদা পোশাকে ছদ্মবেশে ঢুকেছিল। তারা দেবাশিসকে শনাক্ত করার পরই বেরিয়ে আসে। তারপর দ্বিতীয় টিমকে খবর দেওয়া হয়। সেই টিম কাছাকাছি ছিল। খবর পাওয়ামাত্র তিনটি গাড়িতে প্রায় ২০জনের ফোর্স দোকানের ভিতর গিয়ে দেবাশিসকে তুলে নেয়।

    খুকুরদহের ওই অপারেশন শেষ করে তমলুক থানার পুলিশ গোপীগঞ্জে নজর দেয়। সেখানেও সাদা পোশাকের পুলিশ আগে হানা দেয়। অভিযুক্ত ম্যানেজার সুশান্ত মাজি দোকানে ছিল না। মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে অন্য একটি জায়গা থেকে পাকড়াও করা হয়। অনেক রাতে সুশান্তকে তমলুক থানায় আনা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে ১০০গ্রাম চোরাই সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর আগে ৩০সেপ্টেম্বর দাসপুরের সাগরপুর থেকে শ্রীকান্ত মাজি নামে আরও এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ধরা পড়ে। গত ২৩সেপ্টেম্বর তমলুক থানার মিলননগরে সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। সেখান থেকে প্রায় ৫০লক্ষ টাকার সোনার গয়না খোয়া যায়। দাসপুরের তিনজন চোরাই সোনা কিনেছিল বলে পুলিশ জেনেছে।

    উল্লেখ্য, ২৩সেপ্টেম্বর তমলুক থানার মিলননগরে সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। উত্তরপ্রদেশের তিনজন দোকানে ঢুকে ডাকাতি করে চম্পট দেয়। তবে, ওই ডাকাতির ঘটনায় প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে পাঁশকুড়া থানার কৃষ্ণনগরের বাপ্পাদিত্য বাগ ও তার সহযোগী দিলীপ মাইতিকে ৩০সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রেফতার করে। চোরাই সোনা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত তিনজন সহ বাপ্পাদিত্য ও দিলীপের মধ্যে পাঁচ ভাগ হয়। তারপর পাঁশকুড়ার ওই দু’জন সেই সোনা দাসপুরে অনেক কম দামে বিক্রি করে দেয়।

    দাসপুরের খুকুরদহের দেবাশিস সামন্ত এক বছর আগেও হাওড়ার বাগনানে একটি ডাকাতির ঘটনায় চোরাই সোনা কিনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। প্রতিনিয়ত ভ্লগারদের মাধ্যমে প্রচার করে নিত্যনতুন ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানত দেবাশিস। নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বাম্পার অফার’ নিয়ে ভ্লগিং করত। কখনও সংবাদপত্রে দেওয়া দরের থেকে সোনার দাম আড়াই হাজার টাকা কম, আবার কখনও সোনা কিনলে ফ্রি পেট্রল দেওয়ার অফার দিয়ে ক্রেতা টানত। দোকানের পেজ শেয়ার কর঩লেই কেনাকাটার উপর  ছাড় মিলত ৫০০টাকা। হরেক ছাড়ের নেপথ্যে অনেকেই দেবাশিসের কর্মকাণ্ড সন্দেহের চোখে দেখতেন। চোরাই সোনা কেনার ঘটনায় গ্রেফতারের পর স্থানীয়রা বলছেন, জলের দরে চোরাই সোনা কিনে বাম্পার ছাড় দিত দেবাশিস।
  • Link to this news (বর্তমান)