• ভিড়ে মিশে হাত সাফাই মহিলা ব্যান্ডেল গ্যাংয়ের, কামালপুরে ছিনতাই করতে গিয়ে পাকড়াও এক
    বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: টার্গেট উৎসবের মরশুমের ভিড়। অথবা, মেলার জনসমাগম। সেখানে ঘাপটি মেরে থাকে সুবেশা তরুণীর দল। আর পাঁচজন ভদ্র মহিলার মতো সেজেগুজে দিব্যি ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। দেখে বোঝার জো নেই, ওরা এক একজন ছিনতাইকারী! হাত সাফাইয়ে অত্যন্ত পারদর্শী। সামান্য বেখেয়াল হলেই গলায় থাকা সোনার হার, কানের দুল কিংবা হাতের আংটি হাতিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ভিড়ের মধ্যে। হারাতে হারাতে হাত বদলও করে দিচ্ছে ছিনতাইয়ের স্বর্ণ সামগ্রী। ওরা স্থানীয় নয়। হুগলির ব্যাণ্ডেলে বাড়ি। সবাই ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে। বাংলার উৎসব মরশুমে ঘরে ফেরে। তারপরই নেমে পড়ে হাত সাফাইয়ের কাজে। বাড়তি উপার্জন করে ফের চলে যায় ভিনরাজ্যে। পুলিশ তাদের টিঁকিটিও ছুঁতে পারে না। বেশ কয়েকবছর ধরেই বাংলা, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন উৎসবে ওরা ছিনতাই করে আসছে। পুলিশের খাতায় ওদের একটা আলাদা পরিচয় রয়েছে—ব্যান্ডেল গ্যাং। এখন অনেকে ‘পরিযায়ী মহিলা গ্যাং’ বলেও ডাকে। এবার পুজোয় এই গ্যাংয়ের সদস্যরা বেছে নিয়েছিল নদীয়া জেলাকে। বেমক্কা ধরাও পড়ে গিয়েছে গ্যাংয়ের এক সদস্য। তাকে জেরা করে বাকিদের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছে ধানতলা থানার পুলিশ। 

    দুর্গাপুজো থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে টানা উৎসবের মরশুম। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। অন্তত হাফ ডজন পার্বণ রয়েছে আগামী দেড়-দু’মাসেই। কোথাও হবে ঠাকুর দেখার ভিড়। কোথাও বসে মেলা। সেখানে বিপুল জনসমাগম। এইসব ভিড়বহুল স্থান ব্যান্ডেল গ্যাংয়ের কাছে যেন সাজানো বাগান। এমনই এক বাগানে হাত সাফাই করতে গিয়ে গোল বাঁধিয়ে দেয় দলের সদস্য। কীভাবে? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সেটা ছিল অষ্টমীর দিন। এবছর নদীয়ার অন্যতম আকর্ষণ কামালপুরের বড় দুর্গা দেখতে সেদিন উপচে পড়া ভিড় হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকে ঠাকুর দেখতে আসা বৃদ্ধাকে টার্গেট করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাঁকে ঘিরে ঠেলাঠেলি চলতে থাকে। এর মধ্যেই বৃদ্ধার গলা থেকে মোটা সোনার হার ছিনিয়ে দুই মহিলা। বিষয়টি বুঝতে পেরেই তিনি চিৎকার করে ওঠেন। দ্রুত পুলিশ চলে আসে। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় ব্যান্ডেল গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য পূজা মোদালিয়া। তাকে জেরা করেই ব্যান্ডেল গ্যাংয়ের তথ্য পায় পুলিশ।  

    পূজা পুলিশকে জানিয়েছে, গ্যাংয়ের সব সদস্যের বাড়ি পড়শি জেলা হুগলিতে। পেশায় সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু কিংবা মহারাষ্ট্রে কাজ করে তারা। উৎসবের ভিড়ে ছিনতাই করতেই তাদের ঘরে ফেরা। কাজ হাসিল করেই বসে পড়ে ছিনতাইয়ের সোনাদানার ভাগ করতে। যে যার মতো অংশ নিয়ে চলে যাচ্ছে কর্মস্থলে। এই গ্যাংয়ের হাত সাফাইয়ের ধরণটাও পুলিশকে বেশ অবাক করেছে। পূজা জানিয়েছে, তারা দৃষ্টিনন্দন পোশাক পরেই ভিড়ে মিশে গিয়ে টার্গেট খুঁজতে থাকে। পেয়ে গেলেই তাঁকে চক্রব্যুহের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঘুণাক্ষরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি টেরও পান না। এক ফাঁকে ভিড়ের চাপ কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় গয়নাগাটি। ছিনতাইয়ের কাজটি করে মূলত দুই মহিলা। তাদের পাশে পাশে থাকে আর একজন। সে আসলে ‘রিসিভার’। পরিস্থিতি মতো রিসিভারের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ছিনতাইয়ের পর চোখের পলকে হাত বদল হয়ে যায় সামগ্রীর। ফলে, অনেকক্ষেত্রেই ছিনতাইয়ে সরাসরি যুক্ত সদস্য হাতেনাতে ধরা পড়ে না। পূজার ধরা পড়ে যাওয়াটা ধানতলা পুলিশের বড় সাফল্য।  ধৃত পূজা।
  • Link to this news (বর্তমান)