নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: বরানগরের স্বর্ণ বিপণিতে ডাকাতির আগেই লুটের গয়না বিক্রির পরিকল্পনা প্লট তৈরি করে ফেলা হয়েছিল। সেইমতো ডাকাতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক কেজির গয়না বরানগরের ঘোষপাড়ার এক সোনার ব্যবসায়ীর কাছে ‘বিক্রি’ করা হয়েছিল। পুলিশ পাঁচু সামন্ত নামে ওই ব্যবসায়ী তথা রিসিভারকে গ্রেফতার করেছে। তার কাছ থেকে লুটের কয়েক কেজি সোনাও উদ্ধার হয়েছে। ধৃতকে মঙ্গলবার বারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, কমিশনারেটের গোয়েন্দারা ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে আরও দুই দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করেছেন। তাদের আজ, বুধবার বারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। পুলিশ কমিশনার মুরলিধর শর্মা বলেন, বরানগরের ডাকাতি ও খুনের কাণ্ডে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বরানগরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী রয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের হাতে এই মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ বরানগরের শম্ভুনাথ দাস লেনের সোনাপট্টিতে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। দুষ্কৃতীরা ওই স্বর্ণ বিপণির মালিক শংকর জানাকে খুন করে কয়েক কোটি টাকার গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। তদন্ত নেমে রবিবার রাতেই ব্রেক-থ্রু পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। ঘটনাট মূল ষড়যন্ত্রকারী সঞ্জয় মাইতি ছাড়াও সহযোগী সুরজিৎ শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সঞ্জয়ের বাড়ি দমদমের বেদিয়াপাড়ায়। জেলবন্দি বিহারি গুরু রাকেশ দাসের পরামর্শ ও পরিকল্পনায় ডাকাতির ছক কষেছিল সঞ্জয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ওই সোনার গয়নার রিসিভার পাঁচু সামন্তকে গ্রেফতার করে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, বরানগরের ঘোষপাড়ায় পাঁচুর সোনার গয়না তৈরির কারখানা ও বাড়ি রয়েছে। তার সঙ্গে আগেভাগেই লুটের গয়না বিক্রির কথা সেরে ফেলেছিল সঞ্জয়। ডাকাতির পরই লুটের গয়না পাঁচুর কাছে নিয়ে যায়। পাঁচু ওই গয়না নিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছিল। তদন্তকারীরা জেনেছেন, সোনা বিক্রির কয়েক কোটি টাকা একসঙ্গে নিতে চায়নি সঞ্জয়। যদিও ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানতে সঞ্জয় ও পাঁচুকে পৃথক জেরার পাশাপাশি একসঙ্গে বসিয়েও জেরা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা। কোনওভাবে খুন হওয়া শংকরবাবুর সঙ্গে পাঁচুর কোনও ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল কি না, কোনও কারণে কখনও ব্যবসায়িক বৈরিতা হয়েছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, শংকরবাবুর উপর হামলা চালানো দুই দুষ্কৃতীকে ভিন রাজ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারাই তাঁর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করেছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। ধৃতদের বয়স নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। তবে তাঁদের বয়স ১৯ বছরের মধ্যে। ধৃতদের জেরা করে কারা তাদের এখানে পাঠিয়েছিল, কতদিন আগে তারা বিহার থেকে বরানগরে এসেছিল, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে।