বর্ষার বিদায় এখন নয়, আপাতত দুর্যোগের আশঙ্কা নেই ঘূর্ণাবর্তেও
বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আপাতত রাজ্যে দুর্যোগ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে রাজ্যজুড়ে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে। কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের উপর একটি ঘূর্ণাবর্তর প্রভাব পড়তে পারে। দক্ষিণ বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত আছে। সেটি এদিকে আসতে পারে। আবার নতুন কোনও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। কিন্তু যাই হোক তার জন্য বৃষ্টির মাত্রা খুব বেশি বাড়বে না বলেই আশা করছে আবহাওয়া দপ্তর। দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঘূর্ণাবর্তর প্রভাব উপকূল এলাকায় বেশি পড়বে। রাজ্য থেকে বর্ষা বিদায়ের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে সেই ব্যাপারে মঙ্গলবার পর্যন্ত আবহাওয়া দপ্তর কিছু জানায়নি। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের আরও কিছু এলাকা থেকে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বর্ষার বিদায় হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার স্বাভাবিক দিন ১০ অক্টোবর। ওই সময়ের মধ্যে রাজ্য থেকে বর্ষা বিদায় যে শুরু হচ্ছে না সেটা মোটামুটি নিশ্চিত বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের হিমালয় লাগোয়া এলাকায় মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত আরও কমেছে। এদিন সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জলপাইগুডির ইন্ডং চা বাগান এলাকায় সর্বোচ্চ ৬০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিকর্তা জানিয়েছেন, আজ বুধবার উত্তরবঙ্গে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বৃষ্টি কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু পরদিন থেকে বৃষ্টি কমে সেখানে আবহাওয়ার আরও উন্নতি হবে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় মঙ্গলবার স্থানীয়ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে বৃষ্টি হয়েছে। এই প্রবণতা আপাতত থাকবে দক্ষিণবঙ্গে।
সাধারণভাবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এরাজ্যে দুর্যোগপ্রবণ মাস হিসেবে চিহ্নিত। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে অতীতে অনেকগুলি বড় ধরনের দুর্যোগ রাজ্যে হয়েছে সেপ্টেম্বরের শেষলগ্নে। ১৯৭৮, ১৯৯৫, ২০০০ সালে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাজ্যে অতিবৃষ্টির জন্য বড়ো ধরনের বন্যা হয়েছিল। এই অতিবৃষ্টি পরিস্থিতিগুলির পিছনে ছিল বঙ্গোগপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের ভূমিকা। এর কারণও আছে। আবহাওয়া অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসের মাঝমাঝি সময়ে দেশ থেকে বর্ষা বিদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সময় বঙ্গোপসাগরে কোনও নিম্নচাপ তৈরি হলে সেগুলির পূর্ব ভারতের দিকে আসার প্রবণতা বেড়ে যায় বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, এবারের নিম্নচাপটি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছিল। তাই এই নিম্নচাপটি অন্ধ্র লাগোয়া দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশ করে। তারপর এটি ওড়িশা-ছত্তিশগড়-ঝাড়খণ্ড হয়ে বিহারের উপর এসে হিমালয় লাগোয়া উত্তরবঙ্গে অতিবৃষ্টি জনিত বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এই নিম্নচাপটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হলে সরাসরি দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে যেত। সেক্ষেত্রে ১৯৭৮, ১৯৯৫, ২০০০ সালের মতো বিপর্যয় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত দক্ষিণবঙ্গে।
বর্ষা বিদায় নেওয়ার পর অক্টোবর এবং নভেম্বরের শুরুর দিকে রাজ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকে। কারণ বর্ষা বিদায়ের পর বঙ্গোপসাগরের জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানে কোনও নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেটির শক্তিবৃদ্ধি হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাম্প্রতিক অতীতে এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গ বা প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা এবং প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ-মায়ানমারে।