ভোর থেকে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছিলাম: মমতা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কার্নিভাল নিয়ে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কার্নিভাল শুধু বাংলার একটি উৎসব নয়, বাংলার সাংস্কৃতিক গৌরবের প্রতীক।’ এরপরই তিনি উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওই দিন ভোর থেকে নিজে পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছিলাম।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘উত্তরবঙ্গের মানুষ, তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আমাদের রাজ্যের অঙ্গ। সেই জায়গার শান্তি ও উন্নয়নের জন্য সবসময় নজর দিতে হবে। বাংলার কার্নিভালের আয়োজন শুধু সাংস্কৃতিক মিলনের জায়গা নয়, বরং এটি আমাদের ঐক্য ও গৌরবকে উজ্জ্বল করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু উৎসবের আয়োজন নয়, বরং এর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনতার সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য শুধু উৎসবকে কেন্দ্র করে নয়, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক চিত্র গড়ে তোলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।
প্রসঙ্গত, বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পথে ফিরছে দার্জিলিংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। মঙ্গলবার মিরিকে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলে তিনি আশ্বাস দেন, ‘যত দিন পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন না, তত দিন কমিউনিটি কিচেন চালু থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণকিট বিতরণ, নথিপত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ ক্যাম্প, আধার, প্যান ও রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল প্রসঙ্গে জবাব দিয়ে বলেন, ‘কার্নিভাল বাংলার গর্ব, বাংলার ক্লাবগুলো বছরের পর বছর অপেক্ষা করে থাকে এর জন্য। কেউ যদি প্রশ্ন তুললে সেটা রাজনৈতিক।’ তিনি বলেন, দুর্যোগে উদ্ধারকাজ শুরু করতে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা প্রয়োজন হয়।
মিরিকে পৌঁছে তিনি আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং এক মাসের মধ্যে পরিবারের একজনকে বিশেষ হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মমতা জানান, মিরিকে ভেঙে যাওয়া সেতুটি ১৫ দিনের মধ্যে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া রাজ্যের কৃষি দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য শস্যবিমা কার্যক্রম শুরু করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচ-ছ’জন শিশু। নিহতদের মধ্যে ১৮ জন মিরিক-কালিম্পঙ, পাঁচজন নাগরাকাটা এবং নেপাল ও ভুটানের দুই নাগরিক।’ তিনি জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন, দুর্গত পরিবারের একটি তালিকা তৈরি করতে।
রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন বিপর্যয়ে থাকে, তখন রাজনীতি নয়, উদ্ধার ও পুনর্বাসন গুরুত্বপূর্ণ।’ বিরোধী নেতাদের তোপের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যে তিনি আবার উত্তরবঙ্গে ফেরত আসবেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্মূল্যায়ন করবেন এবং মৃতদের পরিবার ও দুর্যোগে আক্রান্তদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। তিনি যোগ করেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে যা করা সম্ভব, আমরা করেছি, বাকি কাজ প্রশাসনিক স্তরে সম্পন্ন হবে।’
এই সফর ও মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্যোগ মোকাবেলায় রাজনৈতিক সমালোচনার বাইরে থেকে মানুষের পুনর্বাসন ও সুরক্ষা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।