• ভারতের কোন শহরকে ‘পূর্বের অক্সফোর্ড’ বলা হয়, জানলে অবাক হবেন
    আজকাল | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পশ্চিম অংশে অবস্থিত পুনে শহরটি “পূর্বের অক্সফোর্ড” নামে খ্যাত। এই উপাধি শহরটির দীর্ঘকালীন শিক্ষা, জ্ঞান ও বৌদ্ধিক বিকাশের ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। পুনে এমন এক শহর যেখানে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটেছে। এর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বিশ্বজনীন পরিবেশ একে ভারতের অন্যতম শিক্ষা-কেন্দ্রিক শহরে পরিণত করেছে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও বিশেষায়িত কোর্সের জন্য পুনেতে আসে।

    ‘পূর্বের অক্সফোর্ড’ উপাধি অর্জনের পেছনে পুনের অসাধারণ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ এবং শতাব্দীপ্রাচীন শিক্ষাচর্চার সংস্কৃতি ভূমিকা রেখেছে। শহরটিতে ৮০০-রও বেশি কলেজ এবং ৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি, চিকিৎসা, কলা, বাণিজ্য, আইন ও ব্যবস্থাপনাসহ নানাবিধ বিষয়ে পাঠদান হয়। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা মূলত শিক্ষার মান, গবেষণার উৎকর্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পুনের অগ্রগতিকেই নির্দেশ করে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু পুনের বৌদ্ধিক পরিবেশে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং একে আধুনিক জ্ঞানের সঙ্গে ভারতীয় মূল্যবোধের মিলনের কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

    পুনে ভারতের বহু বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসভূমি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে না, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা, গবেষণার মানসিকতা ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা গড়ে তোলে। প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

    সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয় – ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা তার গবেষণা কার্যক্রম ও বিস্তৃত পাঠ্যক্রমের জন্য বিখ্যাত।ফার্গুসন কলেজ – ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক এই কলেজটি কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বহু বিশিষ্ট নেতা, পণ্ডিত ও সমাজসংস্কারক এই কলেজের ছাত্র ছিলেন।সিম্বায়োসিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি – বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা আইন, ব্যবসা, সমাজবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আধুনিক শিক্ষা প্রদান করে।ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (FTII) – চলচ্চিত্র, মিডিয়া ও নাট্যকলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, যা বহু পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ও পরিচালক তৈরি করেছে।কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, পুনে (COEP) – এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন প্রকৌশল কলেজ, যা তার কঠোর একাডেমিক মান ও উদ্ভাবনী প্রকল্পের জন্য সুপরিচিত।

    এই প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে পুনেতে এক সমন্বিত শিক্ষা-পরিবেশ গড়ে তুলেছে, যেখানে জ্ঞান, সংস্কৃতি ও পেশাগত বিকাশ পাশাপাশি এগিয়ে চলে।দেশের প্রতিটি রাজ্য এবং ১০০-রও বেশি বিদেশি দেশের শিক্ষার্থীরা পুনের প্রতি আকৃষ্ট হয় উন্নতমানের শিক্ষা ও প্রাণবন্ত ছাত্রজীবনের কারণে। আধুনিক গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, হোস্টেল ও ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের জন্য এক সমৃদ্ধ শিক্ষানুভূতি তৈরি করে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রযুক্তি প্রকল্প, ইন্টার্নশিপ ও উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ডের সুযোগ শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করে।

    শুধু ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাই নয়, পুনে আজ গবেষণা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। শহরে অসংখ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে, যা শিক্ষা ও শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করছে। এই সমন্বিত অগ্রযাত্রাই পুনেকে সত্যিকার অর্থে “পূর্বের অক্সফোর্ড” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
  • Link to this news (আজকাল)