• মৃত্যুর কথা ভাবিনি, লক্ষ্য ছিল মানুষ বাঁচানো! বলছেন চিকিৎসক ইরফান মোল্লা
    প্রতিদিন | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • রমেন দাস: জল ঢুকছে গ্রামে-গঞ্জে! ভাসছে একের পর এক মানুষ! কিন্তু কান্ডারীকে হুঁশিয়ারি দিলেও প্রাণ বাঁচাবেন কে? হাল ধরবেন কোন মহাপুরুষ? এমনই এক ভয়াবহ আবহে কার্যত জীবনদূত হিসেবে হাজির হন ওঁরা। সেই তাঁদের অর্থাৎ চিকিৎসকদের তৎপরতায় জীবনে বেঁচেছেন বহু। জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) বিধ্বস্ত নাগরাকাটা (Nagrakata)- সহ একের পর এক অঞ্চলে পৌঁছেছেন আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকরাও।

    আর এই আবহেই সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল, উত্তরবঙ্গের (North Bengal) চিকিৎসক ইরফান মোল্লা! জিপ লাইনের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে রীতিমতো আলোচনায় জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH)। বর্ধমানের ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটদুনিয়া! কেউ কেউ ঈশ্বরের সঙ্গেও তুলনা টানছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়ার। কিন্তু কী বলছেন ডাঃ ইরফান মোল্লা (Dr Irfan Molla) ?

    সারাদিন স্বাস্থ্যশিবির সামলে আসা চিকিৎসকের কথায়, ‘৫ অক্টোবর রাত থেকে জল ঢোকা শুরু করে। বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন বহু মানুষ। আমরা ওই দিন সকাল থেকে খবর পাচ্ছিলাম। বিভিন্ন এলাকার অবস্থা খুব খারাপ এটা জানতে পারছিলাম। প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে যেটুকু করা প্রয়োজন শুরু করি। কিন্তু নিজেও তো যেতে হবে, বিপদে পড়া সাধারণ মানুষের জন্য সেই কাজটা তো করতেই হবে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাকে যেতেই হবে।’ চিকিৎসক বলছেন, ‘এরপর যখন বামনডাঙা যাব, তখন ওই জিপ লাইনের মাধ্যমে পেরোতে হয়েছে।’ ভয় লাগেনি? ডাঃ ইরফানের কথায়, ‘না সেই সময় একেবারেই এসব চিন্তা মাথায় আসেনি। লক্ষ্য ছিল মানুষ বাঁচানোর জন্য আমাকে যেতে হবে, কাজটা করতেই হবে। উদ্ধারকারী দলের অভয়বাণী ছিল, কিছু হবে না। পেরিয়ে গিয়েছি। এলাকায় পৌঁছে কাজ করেছি।’ 

    গ্রামেগঞ্জে কাজ করা চিকিৎসকের এমন অভিজ্ঞতা প্রথম। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে কাজে যোগ দেন মেধাবী ইরফান। তাঁর কথায়, ‘এলাকায় পৌঁছে দেখেছি ছোট বাচ্চা জলের মধ্যে ভেসে গেছে। মা পারেননি বাঁচাতে। আবার প্রসূতির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’ এখন কেমন আছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা? ওই চিকিৎসক বলছেন, ‘আগের চেয়ে খানিকটা ঠিক হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে। মোটামুটি আমরাও যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার।’

    ছেলের এমন দুঃসাহসিক কাজে চিন্তায় পড়েছিলেন বর্ধমানে থাকা বাবা, মা। যদিও ইরফানের এই কাজে কী বলছেন ওঁরা? চিকিৎসক ইরফান বলছেন, ‘বাবা-মা প্রথমে একটু চিন্তিত হলেও তাঁরা বলছেন, ভালো করে কাজ করো, মানুষের পাশে থাকতেই হবে।’
  • Link to this news (প্রতিদিন)