• এসআইআর: ম্যাপিংয়ে এখনও ৬৫% মিল রাজ্যে
    আনন্দবাজার | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরুর আগে, এখনও পর্যন্ত হওয়া ‘ম্যাপিং’-এ প্রায় ৬৫% ভোটারের মিল বা পারিবারিক সূত্র পেল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। যদিও বিহারের এসআইআরের আগের ম্যাপিংয়ে মিল পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ৮০%। অবশ্য কমিশন সূত্রে খবর, এখনও কাজ কিছুটা বাকি আছে। এরই সমান্তরালে বিহার এসআইআর-বিজ্ঞপ্তির পরে এ রাজ্যে প্রবীণদের জন্মের শংসাপত্র চাওয়ার সংখ্যা কত বাড়ছে, সব জেলাশাসকের থেকে সেই তথ্যও চেয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আজ, বুধবার কমিশনের প্রতিনিধিদের বৈঠকে এই দুই তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে বলে খবর।

    ভোটার তালিকায় ‘ম্যাপিং’-এর অর্থ— এ বছর প্রকাশিত সর্বশেষ ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০০২ সালে শেষ এসআইআর-তালিকা মিলিয়ে দেখা। দুই তালিকায় কত জনের নাম অভিন্ন, দেখা হয় তা। সঙ্গে দেখা হয়, এখনকার ভোটার তালিকায় থাকা কোনও ভোটারের মা-বাবার নাম গত এসআইআরের তালিকায় রয়েছে কি না। এই মিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টরা চিহ্নিত হয়ে যান এমনিতেই। নির্বাচন কমিশনের সূত্রে বলা হচ্ছে, তাঁদের আলাদা করে কোনও নথিপত্র বা প্রমাণ দাখিল করতে হবে না আসন্ন এসআইআরের সময়ে। শুধুমাত্র কমিশনের দেওয়া আবেদনপত্র (এনুমারেশন ফর্ম) ভর্তি করলেই চলবে। যাঁদের নামের মিল বা সূত্র পাওয়া যাবে না, তাঁদের ক্ষেত্রে নথিপত্র-যাচাইয়ের প্রয়োজন হবে।

    মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত যে জেলাগুলি ম্যাপিংয়ের চূড়ান্ত কাজ শেষ করেছে, তাতে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, গোটা রাজ্যে দুই তালিকায় নাম বা সূত্র থাকা ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৬৫%। এ বছর প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, এ রাজ্যের ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ১৬৫। এই সূত্রে প্রায় ৪.৯৬ কোটি ভোটারের নামের মিল বা সূত্র পাওয়া যাচ্ছে। এখনকার হিসেবে প্রায় ২.৬৭ কোটি ভোটারের নিবিড় যাচাই হবে এসআইআর শুরু হলে। কমিশন সূত্রের খবর, এই তথ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে সব চেয়ে বেশি এমন মিল পাওয়া গিয়েছে, প্রায় ৭০%। সীমান্তবর্তী তথা উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো বড় জেলায় সেই ম্যাপিংয়ের হার খুব একটা বেশি নয়। সেখানে এখনও মিল পাওয়া গিয়েছে যথাক্রমে ৩৫% এবং ৪৫%। আবার সীমান্তবর্তী বাকি জেলাগুলিতে ম্যাপিংয়ে মিলের হার গড়ে ৬০-৬৫%। ঝাড়গ্রামে প্রায় ৬০%, পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৭০%, হাওড়ায় প্রায় ৬৯%, পুরুলিয়ায় প্রায় ৭১%, হুগলিতে প্রায় ৬৯%। যদিও জেলা-কর্তাদের বক্তব্য, রাতভর এই ম্যাপিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে এই সব শতাংশের হারে কিছুটা হেরফের হতে পারে।

    অন্য দিকে, আজ বুধবার, পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপনির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতীর নেতৃত্বে হওয়া বৈঠকের আগে জন্মের পুরনো শংসাপত্রের (ডিলেড বার্থ রেজিস্ট্রেশন) চাহিদার অনলাইন ও অফলাইন তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে জেলাশাসকদের থেকে। বলা হয়েছে, গত ২৪ জুন বিহারে এসআইআর ঘোষণার পর থেকে এ রাজ্যে এই প্রবণতা কতটা বাড়ছে, সেই তথ্য বৈঠকের আগেই জমা দিতে হবে কমিশনের কাছে।

    কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, সত্তর বা আশির দশকে জন্মানো কোনও ব্যক্তির কাছে এখনকার মতো জন্মের শংসাপত্র থাকত না। তবে পঞ্চায়েতের তরফে শংসাপত্র দেওয়ার রীতি ছিল। সাধারণ নিয়মে জন্মের ছ’মাসের বেশি সময়ের পরে জন্মের সংশাপত্রের আবেদন করতে হলে, তা যায় মহকুমাশাসক বা এসডিও-র কাছে। এসডিও স্কুল-মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের নথি, সরকারি চাকরি বা অন্য কোনও কাগজ দেখে পর্যাপ্ত অনুসন্ধান এবং শুনানির মাধ্যমে আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করে ছাড়পত্র দেন। তার পরে সেই শংসাপত্র দেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়া নথিবদ্ধ থাকে জন্ম-মৃত্যুর সরকারি পোর্টালে। কিন্তু এই পদ্ধতি এড়িয়ে অফলাইনেও এমন অনেক শংসাপত্র রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের একাংশের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাচ্ছে কমিশন। অফলাইনে নথি সংরক্ষিত থাকার সুযোগ প্রায় নেই। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সেই পদ্ধতির কতটা সাধু অথবা কতটা অসাধু, তাই খতিয়ে দেখতে চাইছে কমিশন।

    পর্যবেক্ষক শিবিরের অনেকই জানাচ্ছেন, এসআইআর শুরুর পরে যাঁদের নাম ম্যাপিংয়ের আওতায় থাকবে না, তাঁদের ক্ষেত্রে জন্মের শংসাপত্র বা অন্য একাধিক নথির প্রয়োজন হবে। সম্ভবত সেই কারণে এই চাহিদা বাড়ছে। তবে এর পুরোটার নেপথ্যেই অসাধু উদ্দেশ্য রয়েছে— এমন মনে করার কারণ নেই। অনেকে হয়তো বাধ্য হয়েই এই শংসাপত্র জোগাড় করতে চাইছেন। তবে এর আড়ালে অযোগ্য কোনও ব্যক্তিও এই পথে হাঁটছে কি না, সমান্তরালে তা-ও খতিয়ে দেখতে চাইছে কমিশন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)