বিহারে ‘চিরাগ’ হতে পারেন বড় ফ্যাক্টর, তৈরি হচ্ছে নতুন সমীকরণ
আজকাল | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও বেড়ে গেছে। যখন সবাই ভেবেছিল এবার ভোটের লড়াই যথেষ্ট গরম, তখনই শোনা গেল নতুন এক জোটের সম্ভাবনার কথা — এলজেপি (রামবিলাস) প্রধান চিরাগ পাসওয়ান নাকি কৌশলবিদ-থেকে-রাজনীতিক প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টির সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন, যদি এনডিএ-র আসন-বণ্টন নিয়ে মতৈক্য না হয়।
২০২৫ সালের নভেম্বর ৬ ও ১১ তারিখে ভোট হবে বিহারে। রাজ্যজুড়ে এখন মূল লড়াই জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA)–এর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে। জোটে রয়েছে বিজেপি, জেডিইউ, এলজেপি (রামবিলাস), ও ছোট সহযোগী দল হাম (সেক্যুলার) ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বাধীন আরএলএম।
চিরাগ পাসওয়ান, যিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রয়াত রামবিলাস পাসওয়ানের উত্তরসূরি, দাবি করেছেন ২৪৩টির মধ্যে অন্তত ৪০টি জেতার মতো আসন। কারণ, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার দল যে ৫টি আসনে লড়েছিল, সবকটিতেই জয়ী হয়েছিল।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, চিরাগ “সম্মানজনক” আসন চেয়েছেন এবং কোনওভাবেই সংখ্যা কমাতে রাজি নন। এমনকি তিনি নাকি বলেছেন, দরকার হলে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে বিহারের মাটিতে লড়াই করবেন — “বিহার ফার্স্ট, বিহারি ফার্স্ট” নীতি তার কাছে অগ্রগণ্য।
এক প্রতিবেদনে ইন্দ্র মোহন কুমার জানান, “চিরাগ পাসওয়ান স্পষ্ট জানিয়েছেন, যদি এনডিএ তার দাবি না মেনে চলে, তবে তিনি প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন।” এমনকি তিনি শাহাবাদ অঞ্চলের কোনও আসন থেকেও লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইন্ডিয়া টুডে সূত্রে জানা গেছে, বিজেপি ও জেডিইউ সমান সংখ্যক আসনে লড়তে প্রস্তুত। মোট ২০৫টি আসন এই দুই দলের মধ্যে ভাগ হবে বলে আলোচনা চলছে। বাকি ৩৮টি আসন ছোট মিত্র দলগুলির মধ্যে ভাগ করা হবে — এলজেপি (রামবিলাস), হাম ও আরএলএম-এর মধ্যে।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এলজেপি পাবে ২৫টি, হাম ৭টি এবং আরএলএম ৬টি আসন। তবে ছোট দলগুলির অংশ কমে গেলে, বিজেপি তাদের রাজ্যসভা বা বিধান পরিষদের আসন দিয়ে ক্ষতিপূরণ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এলজেপি এনডিএ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, কারণ আসন বণ্টন নিয়ে জেডিইউর সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল। তখন চিরাগ পাসওয়ান প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের শাসনব্যবস্থাকে সমালোচনা করেন এবং বলেন, তার দল বিজেপির বিরোধী নয়, বরং নীতীশের “বিফল প্রশাসনের” বিরুদ্ধে।
সেই সিদ্ধান্তে জেডিইউ বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। এলজেপির ভোট বিভাজনের কারণে অন্তত ২৭টি আসনে জেডিইউ পরাজিত হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল হাসানপুর আসন, যেখানে এলজেপির ভোটে আরজেডি প্রার্থী তেজ প্রতাপ যাদব জয়ী হন।
অন্যদিকে, প্রশান্ত কিশোরের নতুন দল জন সুরাজ প্রথমবারের মতো নির্বাচনে নামছে। তাদের প্রচারের মূল বিষয় বেকারত্ব, অভিবাসন ও বিহারির গর্ব। চিরাগ ও কিশোর— দুই তরুণ নেতা— একই রাজনৈতিক থিমে কথা বলছেন, যা ভবিষ্যতের জোট রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, বিহার বিধানসভা নির্বাচন দুই দফায় — ৬ ও ১১ নভেম্বর, আর ফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর। ২৪৩ সদস্যের বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে ২২ নভেম্বর ২০২৫।