ফের ব্যর্থ মোদির কূটনীতি? ভিসা নীতি শিথিল করতে নারাজ ব্রিটেন, ভারতসফরে এসে সাফ জানালেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার
আজকাল | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক দিকে সদ্য স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির সুফল তুলে ধরে ব্রিটেনে বিনিয়োগ টানা, অন্য দিকে অভিবাসন নিয়ে কড়া অবস্থান বজায় রাখা। এই দুই লক্ষ্য নিয়েই আজ ভারতে এসে পৌঁছলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যর কেয়ার স্টারমার। তবে ভারতে পা রাখার আগেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ভিসা নীতি শিথিল করার কোনও পরিকল্পনা লন্ডনের নেই।
স্টারমারের সঙ্গে এসেছেন ১০০ জনেরও বেশি শিল্পোদ্যোগী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক বিশাল প্রতিনিধিদল। লক্ষ্য, ব্রিটেনের শ্লথ অর্থনীতিতে গতি আনা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি। কিন্তু ভারতীয় কর্মী বা ছাত্রদের জন্য ভিসার দরজা আরও প্রশস্ত করার কোনও পরিকল্পনা যে তাঁর সরকারের নেই, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
মুম্বই আসার পথে বিমানে সাংবাদিকদের স্টারমার বলেন, "আসল বিষয়টি ভিসা নিয়ে নয়। মূল লক্ষ্য হল দুই দেশের ব্যবসার মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো, বিনিয়োগ আনা এবং ব্রিটেনে কর্মসংস্থান ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।" তাঁর কথায়, বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় ভিসা কোনও অংশই ছিল না এবং সেই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ আলোচনার পর গত জুলাই মাসে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে এই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ গাড়ি এবং হুইস্কি রফতানি করা তুলনামূলক সস্তা হবে। পাশাপাশি ব্রিটেনে ভারতীয় বস্ত্র ও গয়না রফতানির খরচ কমবে। চুক্তিতে স্বল্পমেয়াদি ভিসায় ব্রিটেনে কর্মরত ভারতীয় কর্মচারীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিন বছরের ছাড় দেওয়া হলেও, অভিবাসন নীতিতে বড় কোনও পরিবর্তনের পথে হাঁটেনি লেবার সরকার। বরং গত সপ্তাহে দলীয় সম্মেলনেই ব্রিটেনে অভিবাসন কমিয়ে আনার বিষয়ে কঠোর নীতির কথা ঘোষণা করেছে তারা।
এই দু'দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে স্টারমারের। সফরের ঠিক আগেই মোদি সমাজ মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জন্মদিনের 'উষ্ণ শুভেচ্ছা' জানিয়েছিলেন। এই বিষয়ে স্টারমারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট বলেন, "পরিষ্কার জানাচ্ছি, আমি পুতিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাইনি এবং জানাবও না। আমার মনে হয়, এটা শুনে কেউ অবাক হবেন না।"
ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কেনা নিয়ে মোদিকে কোনও প্রশ্ন করবেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবেও বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান স্টারমার। তিনি বলেন, ব্রিটেনের নজর রাশিয়ার 'ছায়া জাহাজ'-এর দিকে। উল্লেখ্য, পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন দেশ থেকে তেল পাচারকারী ট্যাঙ্কারগুলিকেই 'ছায়া জাহাজ' বলা হয়।
তবে এই সফরের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আগামী বছর থেকে দিল্লি ও হিথরোর মধ্যে তৃতীয় দৈনিক বিমান চালানোর কথা ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ম্যাঞ্চেস্টার বিমানবন্দর থেকেও দিল্লিতে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, আর এবার ইংল্যান্ডে ভারতীয়দের কাজের সুযোগ বাড়াতে ব্যর্থ হওয়া, দুই ঘটনাতেই মুখ পুড়ল মোদী সরকারের। বিষয়টিকে বিদেশনীতির ব্যর্থতা হিসাবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।