•  "কাকে বোকা বানাচ্ছেন?" কেরালায় ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঋণ মকুব নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র মন্তব্য হাইকোর্টের ...
    আজকাল | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওয়ানাডের  ভয়াবহ ভূমিধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির ঋণ মকুবের  বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কেরালা হাইকোর্ট তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) বিচারপতি এ.কে. জয়শংকরন নাম্বিয়ার এবং বিচারপতি জোবিন সেবাস্টিয়ানের ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে শুনানির সময় বলেন, “কেন্দ্র সরকারের যদি সাহায্য করার ইচ্ছা না থাকে, তবে অন্তত সাহস করে তা জনগণকে জানাক।”

    বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় মন্তব্য করে যে, এই ঘটনায় “কেন্দ্র সরকার কেরালার মানুষকে বঞ্চিত করেছে।” আদালত জানায়, “এই ধরনের কৌশল কাজের নয়। যদি সত্যিই সাহায্য করতে না চান, তাহলে তা স্পষ্টভাবে বলুন। কিন্তু অন্তত মানুষ যেন জানতে পারে যে, এমন সংকটের মুহূর্তে কেন্দ্র সরকার কেরালার পাশে দাঁড়ায়নি।”

    বেঞ্চ আরও উল্লেখ করে, “আমরা আগেই বলেছি, এটি এমন একটি পরিস্থিতি নয় যেখানে কেন্দ্র সরকারের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু আপনাদের হলফনামা পড়ে বোঝা যাচ্ছে, আপনারা আবারও সেই ক্ষমতাহীনতার যুক্তি দেখিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। কেন এইভাবে দায়িত্ব এড়ানো হচ্ছে?”

    হাইকোর্টের এই মন্তব্য আসে একটি স্বতঃপ্রণোদিত  মামলার শুনানিতে, যা ওয়ানাডের পুনর্বাসন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য আদালত নিজে থেকেই শুরু করেছিল। শুনানির সময় কেন্দ্র সরকার জানায় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংক ঋণ মকুবের  কোনো প্রভিশন বা আইনি বিধান নেই।

    বিচারপতি নাম্বিয়ার এদিন আদালতে সংবাদপত্রের একটি শিরোনামও পড়ে শোনান—যেখানে বলা হয়েছিল যে আসাম ও গুজরাটের ২০২৪ সালের বন্যার জন্য উচ্চস্তরীয় কমিটি তহবিল অনুমোদন করেছে। বিচারপতি মন্তব্য করেন, “এই বন্যাগুলিকে তো গুরুতর দুর্যোগ হিসেবেও শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। তাহলে সেটি কীভাবে সম্ভব হলো?”

    তিনি আরও বলেন, “এগুলো নিছক আমলাতান্ত্রিক কথাবার্তা। প্রশ্ন হচ্ছে—কেন্দ্র সরকারের পক্ষে কাজ করা সম্ভব কি না তা নয়, তারা আদৌ কাজ করতে চায় কি না। যদি চায় না, তাহলে সাহস করে বলুক। জনগণকে বোকা বানানো বন্ধ করুন।”

    বিচারপতি নাম্বিয়ার আরও মন্তব্য করেন যে, “কেরালা কেন্দ্র সরকারের দান বা অনুগ্রহের প্রয়োজন নেই। আমরা সংবিধানকে শ্রদ্ধা করি এবং সংবিধানের যে নৈতিকতা, তার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই আমরা কেন্দ্র সরকারকে কোনো নির্দেশ দিতে চাই না। সেটি আমাদের সৌজন্যবোধ ও সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবেই।”

    আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, কেন্দ্র সরকার যেন আগামী শুনানির তারিখে (দুই সপ্তাহ পর) কেরালা সরকারের দাখিল করা হলফনামার জবাব দাখিল করে। কেরালা হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ রাজ্য রাজনীতিতে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি কেবল প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্ন নয়, বরং কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্কের নৈতিক ও সাংবিধানিক ভারসাম্য নিয়েও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
  • Link to this news (আজকাল)