পুর-নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রভাবশালীদের নাম, ফের চার্জশিট দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নড়েচড়ে বসল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ফের চার্জশিট দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু করল সংস্থাটি। তদন্তে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে একাধিক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর পরিবারের সদস্যদের নাম। এমনকি, এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছেলেকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। মনে করা হচ্ছে, এই নামগুলোই হয়তো জায়গা পেতে পারে সিবিআইয়ের আসন্ন চার্জশিটে।
তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সূত্র ধরেই পুরসভা নিয়োগের দুর্নীতির খোঁজে পৌঁছায় সিবিআই। প্রথমে ব্যবসায়ী অয়ন শীলকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উদ্ধার হয় বহু ওএমআর শিট ও উত্তরপত্র, যা থেকেই বেরিয়ে আসে পুর-নিয়োগ দুর্নীতির চক্র। অয়নের সংস্থা বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআরের দায়িত্বে ছিল। সেখান থেকেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, নিয়ম ভেঙে ও অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ হয়েছে বহু ক্ষেত্রে।
গত বছর এই মামলায় প্রথম চার্জশিট দেয় সিবিআই, সেখানে নিয়োগের টাকা লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছিল। চার্জশিট অনুযায়ী, অয়নের দুই এজেন্ট শমীক চৌধুরী ও দেবেশ চক্রবর্তী ওরফে কানুদা বিভিন্ন পুরসভায় প্রায় ২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে ‘টাকা দিয়ে চাকরি’ পাইয়ে দেন। প্রতিজনের কাছ থেকে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। অভিযোগ, অয়নের মাধ্যমে কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্তত ১৬টি পুরসভায় বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এই নিয়োগ তালিকায় রাজনীতিকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামও পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্তকারীদের ধারণা, নতুন চার্জশিটে তাঁদের নামও থাকতে পারে। এক সিবিআই আধিকারিক জানিয়েছেন, কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুবিধা পেয়েছেন। তদন্ত এগোচ্ছে সেই দিকেই।
উল্লেখ্য, স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়ও একই ধরণের চিত্র সামনে এসেছিল। আদালতে বহু প্রভাবশালী নেতানেত্রীর নাম জমা করেছিল তদন্ত সংস্থা। এখন পুর-নিয়োগ দুর্নীতিতেও সেই ছায়া স্পষ্ট।প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২০ মার্চ ইডির হাতে গ্রেফতার হন অয়ন শীল। ইডি তখন অয়নের চুঁচুড়ার বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিসে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায়। তাঁর বাবা-মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেয় এবং একাধিক দিন ধরে জেরা করে।
হেফাজতে থাকাকালীন অয়ন বারবার জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করেছে। বর্তমানে তাঁর মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আদালত আগেই সিবিআইকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওএমআর শিটে কারচুপির অভিযোগ গুরুতর। হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর ভবিষ্যৎ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। অয়নের জামিন আপাতত স্থগিত রেখেছে আদালত, তবে তিন মাস পর পুনরায় আবেদন করার অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে চার্জশিটের প্রস্তুতি শুরু করেছে সিবিআই।