• বাংলা থেকে ত্রিপুরায় গিয়ে ভূলুণ্ঠিত দলীয় পতাকা তুললেন বীরবাহা, অভিষেকের গাড়ির উপর আক্রমণ মনে করালেন সুস্মিতা...
    আজকাল | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিতাই দে, আগরতলা: ত্রিপুরা সফরে আসা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। আজ দুপুরে আগরতলা বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর তাঁদের নিতে আসা চারটি গাড়ির মধ্যে তিনটি গাড়ি ফিরিয়ে দেয় প্রশাসন ও পুলিশ। প্রতিবাদে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিমানবন্দরের বাইরে ধর্ণায় বসেন। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বিজেপির প্ররোচনায় ঘটানো হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

     তাঁর দাবি, 'এভাবে তৃণমূলকে আটকানো যাবে না।' পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দর থেকে পায়ে হেঁটে আগরতলা চিত্তরঞ্জন রোড স্থিত প্রদেশ অফিসে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হলে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে এতদূর পায়ে হেঁটে গেলে নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না পর্যাপ্ত, এই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কুনাল ঘোষ। পরবর্তী সময়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের গাড়ি দেওয়া হলে গাড়িতে করে হামলা হওয়া প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস অফিসে এসে পৌঁছায় ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি।

    ওই অফিসে এসে অফিসের সামনে ভেঙে পড়া দলীয় পতাকা সহ ফুলের টব ও  তৃণমূল কংগ্রেসের সাইনবোর্ড গুলি পরিদর্শন করেন এবং পতাকাগুলি রাস্তা থেকে তুলে পার্টি অফিসে নিয়ে রাখেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী অফিসে ঢোকার সময় রাস্তায় পড়ে থাকা দলীয় পতাকা গুলি তুলে দেন। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি রাজ্যে আসায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে আগরতলা শহরে এবং প্রদেশ কার্যালয়ের সামনে আধা সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে ত্রিপুরা পুলিশ ও TSR দিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিনিধির দলটির কনভয়েও ছিল প্রচুর পরিমাণে আধা সামরিক বাহিনী , ত্রিপুরা পুলিশ ও টি এস আর। 

     দলীয় অফিসে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী-সহ সাংসদ ও দলীয় নেতৃত্বরা। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে তাঁরা ত্রিপুরা পুলিশের মহা নির্দেশকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং গতকাল রাতে ত্রিপুরা প্রদেশ পার্টি অফিসে হামলার বিষয়ে আলোচনা করেন। পুলিশ মহা নির্দেশকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ছয় সদস্য প্রতিনিধি দলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, দলের সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ, সাংসদ সুস্মিতা দেব, সাংসদ সায়নী ঘোষ, সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, ছাত্রনেতা সুদীপ রাহা। পুলিশ মহা নির্দেশকের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন,  'আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারের বিধায়ক এবং সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বরা তৃণমূল পার্টি অফিসের আক্রমণের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এবং তৃণমূলের কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাঁদের আটক করে শাস্তি দেওয়া।' তিনি আরও বলেন , '২০২১ সালে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির গাড়ির উপর হামলা হয়েছে, আমার গাড়ির উপর হামলা হয়েছে কিন্তু আজ চার থেকে সাড়ে চার বছর হয়ে গেল, দু'জন সংসদের উপর হামলা হল। তা নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি এবং কেউ আটক হয়নি।' সুস্মিতা দেব আরও বলেন, 'বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের পুলিশের নতুন মহা নির্দেশকের উপর তৃণমূল কংগ্রেসের আস্থা রয়েছে। যে বা যাঁরা আক্রমণ করেছেন পার্টি অফিসের উপর, হামলা চালিয়েছেন, তাঁদের আটক করে শাস্তি দেওয়া হবে।' আগামিকাল পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এফ আই আর কপি জমা দেবেন বলে জানান সাংসদ সুস্মিতা দেব। 

    এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। ওইদিন আগরতলার তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। রীতিমতো লাঠি নিয়ে হামলা করা হয়। ছেঁড়া হয় তৃণমূলের পতাকা, ফ্লেক্স। কার্যালয়ের সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায় সেগুলি। অভিযোগ, পুলিশ বাধা দিলেও কোনও লাভ হয়নি। তৃণমূলের দাবি, এই হামলার নেপথ্যে বিজেপি।  এক্স হ্যান্ডেলে এই হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের তরফে লেখা হয়, ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ত্রিপুরা কার্যালয়ে বিজেপি-সমর্থিত দুষ্কৃতীদের নৃশংস হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আঘাত। ক্ষমতাসীনরা যখন তাঁদের বিরোধীদের স্তব্ধ করতে হিংসাকে হাতিয়ার করছে, তখন তারা শক্তি নয়, নিজেদের ভয় ও নৈতিক দেউলিয়াকেই প্রকাশ করছে।’

     
  • Link to this news (আজকাল)