বন্যায় ভেসে আসা গাছের গুঁড়িতেই বাজিমাত! কাঠ বেচে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘরে তুলছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা...
আজকাল | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘পুষ্পা’ সিনেমার দৃশ্যটি মনে আছে। পাহাড়ের কোলে জঙ্গলের ভিতরে লুকিয়ে রাখা কোটি কোটি টাকার লালচন্দনের কাঠ পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন নায়ক অল্লু অর্জুন। সেই দৃশ্য দেখা গিয়েছে রবিবার উত্তরবঙ্গের হড়পা বানে। কয়েকদিন আগে উত্তরাখণ্ডের হড়পা বানেও নদীর জলে লাখো লাখো গাছের গুড়ি ভেসে আসতে দেখা গিয়েছিল। পুষ্পা সিনেমায় কোটি টাকার সম্পদ নায়ক কায়দা করে বাঁচিয়ে ফেলেছিলেন। উত্তরাখণ্ডে গাছের গুঁড়ি কেউ তুলতে পেরেছিলেন কি না জানা নেই। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য এই শনিবারের বিপর্যয় আশীর্বাদ রূপে হাজির হয়েছে।
প্রবল বর্ষণ এবং হড়পা বানে বহু ফসল নষ্ট হয়েছে। নানা ভিডিওয় দেখা গিয়েছে লক্ষ লক্ষ গাছের গুঁড়ি ভেসে আসছে নদীর জলে। তোর্সার জলে ভেসে আসা সেই গাছের গুঁড়ি নদীর তীরে বসবাসকারী বহু মানুষকে রাতারাতি লাখপতি করে দিয়েছে। বন্যার জলে কোথাও পাইন, কোথাও সেগুন আবার কোথাও বহু মূল্যবান গাছ ভেসে এসেছে। এই দৃশ্যে অভ্যস্ত নন কোচবিহারের বাসিন্দারা। তাঁরা দেখছেন কিলোমিটার পর কিলোমিটার জুড়ে ভাসছে গাছ। কোচবিহার জেলার বেশিরভাগ বন্যার্তরা যখন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ব্যস্ত, তখন কারিশাল, ফাঁসির ঘাট, হরিণ চাওড়া এবং ঘুঘুমারি গ্রামের একদল মানুষ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তোর্সা নদীর জলে ভেসে যাওয়া কাঠ সংগ্রহ করছেন।
প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও সেই সব কাঠের গুঁড়ি সংগ্রহ করতে অনেকে নদীর তীরে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অনেকে সেই গুঁড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছেন। অনেকের চাষের জমিতে প্রবল স্রোতে গাছের গুঁড়ি ঢুকে পড়েছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করা গাছের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকায়। যেমন কথায় রয়েছে, মরা হাতি দাম লাখ টাকা। রীতিমতো আর্থ মুভার দিয়ে ট্রাক্টরে তোলা হচ্ছে বড় বড় গুঁড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই দৃশ্য।
এই বিপুল পরিমাণ গাছের গুঁড়ি কোথা থেকে এল সে সম্পর্কে বনদপ্তর জানিয়েছে, ভুটানের ফুন্টশোলিংয়ে ভুটান সরকারের একটি কাঠের গুদাম বন্যায় ভেসে গিয়েছে। সেই কারণে এত বিপুল পরিমাণ কাঠ জলের স্রোতে ভেসে চলে এসেছে।
হরিণ চাওড়ার বিউটি বিবি বলেন, “রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে, আমরা কাঠের উনুনে রান্না করি। আমাদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তোর্সায় ভাসমান কাঠ সংগ্রহ করছেন যাতে আমরা জ্বালানি কাঠ মজুদ করতে পারি।” তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী এবং দেওর এখন পর্যন্ত ১৫টি গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করেছেন।
ঘুঘুমারির স্বপন দাস বলেন, “আমিগত ১৫-২০ বছর ধরে বন্যার জলে ভেসে যাওয়া গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করছি। কিন্তু এবারের মতো এত গাছের গুঁড়ি আগে কখনও দেখিনি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এত বেশি পরিমাণে কাঠ ভেসে আসবে তাঁরা ভাবতেও পারেননি। বহু বন্যা দেখেছেন, তবে এই ধরনের পরিস্থিতি কখনও দেখেননি। সেই কাঠ সংগ্রহ করতে বেশ কয়েকজন জলে তলিয়ে গিয়েছে। তবে যারা ওই কাঠ সংগ্রহ করতে পেরেছে, সেগুলির দাম এখন বেশ ভাল বলেই জানা গিয়েছে। এবং কাঠের ব্যবসায়ীরা সেই কাঠ কিনতে রীতিমতো ভিড় জমিয়েছেন।