• বিশ্বভারতীর স্নাতক-স্নাতকোত্তরে ফাঁকা ২০০রও বেশি আসন! উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদরা
    প্রতিদিন | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • দেব গোস্বামী, বীরভূম: বিশ্বভারতীর ফাঁকা আসন সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তনীদের। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া একমাত্র সচল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারও ভর্তি নিয়ে পড়ুয়াদের আগ্রহ তেমন নেই। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে মিলিয়ে প্রায় ২০০টিরও বেশি আসন শূন্য। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,স্নাতক স্তরে প্রায় ১,৭৪০টি এবং স্নাতকোত্তর স্তরে প্রায় ৬০০টি আসন নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে হিন্দি ভবনে ২০টি, সংস্কৃত বিভাগে ২৮টি, ওড়িয়া বিভাগে ১৫টি, তুলনামূলক ধর্ম বিভাগে ৪৫টি, অর্থনীতি বিভাগে ১৫টি, দর্শন বিভাগে ৩১টি আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরে ৫ বছরের সমন্বিত বিজ্ঞান বিভাগে ১২টি, যোগ বিভাগে ২৫টি এবং এম.এড কোর্সে ২৭টি আসন এখনও শূন্য। এমনকি সঙ্গীত ভবন, চিনা ও জাপানি ভাষা-সহ উচ্চশিক্ষা বিভাগেও আসন পড়ুয়ার অভাবে খালি রয়েছে।

    বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন,” বিভিন্ন কারণে আসন শূন্য রয়েছে। তবে নতুন করে ভর্তি প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের পড়ুয়া ভর্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। অনেকেই এখন মূলধারার পাঠক্রমের বাইরে বিকল্প শিক্ষার দিকে ঝুঁকছেন। এটাও একটি কারণ। শুধু বিশ্বভারতী নয়, গোটা দেশেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।” তবে শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তনীরা মনে করছেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‍্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিম্নমুখী হওয়াই পড়ুয়ারা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। একসময় বিশ্বভারতীতে ভর্তি হওয়া ছিল দুষ্কর। ভারতবর্ষ সহ বিভিন্ন দেশ ও ভিন রাজ্যের পড়ুয়ারা পড়াশোনার জন্য ছুটে আসতেন। অথচ বর্তমানে বিভিন্ন ভবন ও বিভাগে আসন খালি পড়ে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকেরা।

    একসময়ে গৌরবময় প্রতিষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হিসেবে ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, কবি নবনীতা দেবসেন, শিল্পী নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, যোগেন চৌধুরী, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবিশের মতো মহারথীরা। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পড়ুয়া শূন্যতার মুখে। যেখানে কেন্দ্র সরকার ২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংস্কৃত ভাষার প্রসারে ২,৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে। সেখানে সংস্কৃত সহ একাধিক বিভাগে ফাঁকা বহু আসন। প্রবীণ আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন,”বিশ্বভারতী শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি রবীন্দ্রনাথের ভাবধারার প্রতীক। সেই প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ কমে যাওয়া গোটা দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরে এক বড় আক্ষেপের সংকেত।” বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শূন্যতার সঙ্কট কাটিয়ে নতুন করে শিক্ষার মান, পরিকাঠামো ও ভাবমূর্তি ফেরানোর দাবি তুলেছেন শিক্ষাবিদ,প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকেরা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)