• দীপাবলি উৎসবের আগে নয়া সিদ্ধান্ত নবান্নের, আতশবাজি শিল্পকে নতুন দিশা দেখাতে ছয় জেলায় তৈরি হচ্ছে বাজি ক্লাস্টার
    আনন্দবাজার | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
  • পশ্চিমবঙ্গে আতশবাজি শিল্পকে সুসংগঠিত ও সুরক্ষিত পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আতশবাজিকে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মর্যাদা দিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের অঙ্গ হিসেবে এ বার জেলায় জেলায় ‘বাজি ক্লাস্টার’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আতশবাজি নির্মাণ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি আরও নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও নিয়মতান্ত্রিক পথে চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    প্রথম পর্যায়ে ছয়টি জেলায় বাজি ক্লাস্টার তৈরির জন্য জমি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, হাওড়া এবং দার্জিলিং। জেলা প্রশাসনের তরফে সারা বাংলা আতশবাজি সমিতির কর্তা বাবলা রায়কে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ধাপে ধাপে প্রতিটি জেলায় একটি করে বাজি ক্লাস্টার তৈরি করা হবে।

    সরকারি সূত্রে খবর, এই ক্লাস্টারগুলিতে বাজি কারখানাগুলি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানান্তরিত হয়ে একত্রিত ভাবে কাজ করবে। এর ফলে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট ইউনিটগুলি একটি সুরক্ষিত পরিবেশে একত্রে কাজ করার সুযোগ পাবে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে, একই সঙ্গে কর্মসংস্থানেরও প্রসার ঘটবে। পরিবেশের ক্ষতি এড়াতে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হবে বলে সরকারি মহল জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরের অবৈধ আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণের ফলে আতশবাজি শিল্প নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তার পরেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হয় রাজ্য। যার ফলস্বরূপ ছ’টি আতশবাজির ক্লাস্টার তৈরির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী কয়েক বছরে রাজ্যের সব জেলাতেই একটি করে আতশবাজি ক্লাস্টার তৈরি করবে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে আতশবাজি ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এর ফলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটি যেমন নিশ্চয়তা পাবে, তেমনই গ্রামীণ এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানের দিশাও খুলে যাবে।

    আতশবাজির কাজে যুক্তদের একাংশের মতে, এত দিন অসংগঠিত ভাবে চলা আতশবাজি উৎপাদন প্রক্রিয়া ক্লাস্টার পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হলে শিল্পের পরিকাঠামো ও মান অনেকটাই উন্নত হবে। উৎপাদনের গুণমান বজায় রেখে দেশ-বিদেশের বাজারে বাংলার আতশবাজির চাহিদা বৃদ্ধি করা যাবে। পাশাপাশি, কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

    সারা বাংলা আতশবাজি সমিতির নেতা বাবলা জানিয়েছেন, সরকারের এই উদ্যোগকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে কোথায় জমি বরাদ্দ হচ্ছে, কী ভাবে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে এবং শিল্পীদের কী ভাবে সহযোগিতা দেওয়া হবে— এসব বিষয়ে শীঘ্রই বৈঠক হবে। সরকারি মহলের আশা, প্রথম পর্যায়ের ছয়টি জেলার বাজি ক্লাস্টার কার্যকর হলে আগামী দিনে বাকি জেলাগুলিতেও একই ব্যবস্থা চালু হবে। এর ফলে আতশবাজি শিল্প নতুন করে প্রাণ পাবে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকা সুরক্ষিত হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)