বিশেষ সংবাদদাতা, আগরতলা: বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু আক্রান্ত হয়েছেন বাংলায়। নাগরাকাটার সেই ঘটনার রেশ আছড়ে পড়েছে প্রায় এক হাজার কিমি দূরে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়। ভাঙচুর করা হয়েছে আগরতলার বনমালিপুরে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সদরদপ্তর। মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনার পরই ছ’সদস্যের এক প্রতিনিধি দলকে ত্রিপুরায় পাঠান দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই প্রতিনিধি দলের সফর ঘিরেই বুধবার আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে ঘটে গেল চূড়ান্ত নাটক। ত্রিপুরার শাসকদল বিজেপির তাণ্ডবে রীতিমতো হেনস্তার মুখে পড়তে হল তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, সাংসদ সায়নী ঘোষ, প্রতিমা মণ্ডল, সুস্মিতা দেব, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এবং যুব নেতা সুদীপ রাহাকে। তাদের জন্য চারটি গাড়ি ঠিক করে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, বিজেপির চোখ রাঙানির ভয়ে তিনটি গাড়ির চালক বিমানবন্দরমুখো হননি। এমনকি, ট্যাক্সি ভাড়া পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের। প্রতিবাদে বিমানবন্দরেই ধরনায় বসতে বাধ্য হন কুণালবাবুরা। উত্তরবঙ্গে ত্রাণের কাজ পরিবদর্শন করে কলকাতা ফেরার সময় সেকথা জানতে পেরে গর্জে ওঠেন মমতা। ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে তাঁর চ্যালেঞ্জ—‘যদি আমাদের প্রতিনিধি দলকে ত্রিপুরায় যেতে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিজে যাব ওখানে। দেখি ওদের কত ক্ষমতা, আমাকে আটকে দেখাক!’
এদিন সকাল থেকেই আগরতলা বিমানবন্দরে ছিল জোরদার নিরাপত্তা। চাপা উত্তেজনার পাশাপাশি গাড়ির সংখ্যাও অন্যান্য দিনের থেকে কম। কলকাতা থেকে বিমানে তৃণমূলে প্রতিনিধিরা সেখানে নামতেই পরিস্থিতি আরও থমথমে হয়ে উঠে। ধরনা ও পুলিসের সঙ্গে দফায় দফায় বাকবিতণ্ডার পর কোনওমতে বিমানবন্দর থেকে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছন তাঁরা। পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘ত্রিপুরার নেতারা বাংলায় গিয়ে ঘোরেন। কিন্তু কোথাও বাধা পান না। তাহলে আমাদের সঙ্গে এরকম কেন?’ ত্রিপুরা পুলিশের ডিজির সঙ্গেও দেখা করেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা।
দলীয় নেতৃত্বের হেনস্তার কথা তুলে ধরেছেন মমতাও। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধিদের আগরতলা বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। গাড়ি দেওয়া হয়নি। এমনকী পেইড ট্যাক্সি পর্যন্ত দেয়নি। বিমানবন্দরে অনেকক্ষণ তাঁরা অপেক্ষা করেন। ওঁরা চেষ্টা করেছিলেন মোটরবাইকে করে যেতে। কিন্তু সেটিরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপর আমি বলি, তোমরা কোনও কিছু না পেলে হেঁটে যাবে।’ ত্রিপুরায় এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনেও এদিন সেরাজ্যের ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে একহাত নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
যদিও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সাফ কথা, ‘বাংলায় আমাদের দলের সাংসদ খগেন মুর্মু, বিধায়ক শংকর ঘোষের উপর বর্বরোচিত প্রাণঘাতী হামলা চলেছে। সেই ঘটনায় গোটা দেশেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রোশ জন্ম নিয়েছে। সেই আক্রোশেই ত্রিপুরায় একটি মিছিল থেকে দু’-তিনজন ওদের পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিস ওদের সরিয়ে দিয়েছে। আর এই সুযোগে কলকাতা থেকে তিন-চার জন চলে এসেছে রাজ্যে। নির্বাচন এলেই এরা ত্রিপুরায় চলে আসেন। উত্তরবঙ্গ নিয়ে নজর ঘোরাতেই ওরা এসেছেন।’