• পাহাড়েই ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে হাজার কোটি, উচ্চবাচ্য নেই কেন্দ্রের
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: আবহাওয়া অনুকূল। সড়ক ও ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক। ছন্দে অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্র। তবে, প্রকৃতির রোষের চারদিন পর বুধবারও পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে ধ্বংসের চিহ্ন বিদ্যমান। যার মধ্যে ‘পাহাড়ের রানি’ দার্জিলিংয়েই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র দখলে রাখলেও দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই মোদি সরকারের। বিজেপির এমপি-এমএলএ’রা বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন, আসছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। কিন্তু প্যাকেজ কোথায়? দুর্গত এলাকা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, কেন্দ্রের তরফে সেই সাহায্য কোথায়? বুধবার এমন প্রশ্নই তুলেছে জিটিএ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে পাহাড়ে পদ্ম শিবিরের বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভ। 

    চারদিন আগে শনিবার প্রকৃতির তাণ্ডব দেখেছে উত্তরবঙ্গে। তার প্রভাব দার্জিলিং পাহাড়ে ছিল বেশি। প্রবল বর্ষণ, ধস, ঝোরা ও নদীর জলস্ফীতিতে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা বিপর্যস্ত। রাস্তা, সেতু, বাড়ি, হোম-স্টে, চাষের জমি, স্কুল, জলের লাইন কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে। এখনও ধসে চাপা পড়ে বহু গ্রাম। দার্জিলিং পুলবাজার, জোড়বাংলো, সুখিয়াপোখরি, রংলিরংলিয়ট, মিরিক শহর ও ব্লক এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিপর্যয়ের ধাক্কা লেগেছে টয়ট্রেনের লাইন, একাধিক পর্যটন কেন্দ্র, চা বাগান ও কমলা বাগানে। ডুয়ার্সেও ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। দুর্যোগের ছোবলে বহু এলাকা লন্ডভন্ড। 

    প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই রাতে পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটেছে ৪৫৯টি। যা রেকর্ড। এতে ৫৪২টি বাড়ি, ৬৭টি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিনও ধস বিধ্বস্ত পাহাড়ের জামিনি এলাকায় ছোট রঙ্গিত নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও একটি দেহ। মৃতের নাম দশরথ ঢালি (৪২)। এনিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১। জখম ২২। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগে উত্তরকন্যায় বলেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন বিপুল সংস্কার। নাগরাকাটা সেতু সারানোর কাজ শুরু হয়েছে। মিরিকে পাকা সেতু হচ্ছে। প্রত্যেকে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। হাজারের উপর পর্যটককে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিরিক সহ আশপাশের বিধ্বস্ত এলাকায় দুধ, লঙ্কা, হলুদ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রীর ৪০০টি ব্যাগ পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও, সোয়েটার সহ অন্যান্য পোশাক দেওয়া হয়েছে দুর্গতদের। কয়েকদিন পর ফের উত্তরবঙ্গে আসব। পঞ্চায়েতমন্ত্রী এবং প্রত্যেক জেলাশাসক নজর রাখছেন পরিস্থিতির উপর।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, বিহার নির্বাচন আছে বলে ছটপুজোয় বিমানভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাতে আমার দুঃখ নেই। কিন্তু দুর্যোগের পর কেন বাগডোগরা থেকে কলকাতার বিমান ভাড়া ১৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে? এটা একেবারেই ঠিক নয়।’

    এদিন বিজনবাড়িতে ধস বিধ্বস্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও স্থানীয় বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জিটিএর ভূমি ও কৃষি বিভাগের সদস্য সতীশ পোখরে। পরে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর পাহাড়ে এমন বিপর্যয় হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির সঙ্গেও দেখা করি। তাঁরা কিছুই বলেননি।’ রাজু বিস্তা অবশ্য বলেন, ‘রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে ভাষণবাজি চলছে। চলতি আর্থিক বছরে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় রাজ্য সরকারকে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। সেই অর্থ রাজ্য সরকার আগে খরচ করুক। এরপর বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য চাইলে কেন্দ্র  আরও অর্থ দেবে।’ 

    শুধু দার্জিলিং নয়, বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলাও। জলপাইগুড়ির বানারহাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা, নদীর বাঁধ ও পাড় ভেঙেছে। আলিপুরদুয়ারে জলদাপাড়া ফরেস্টে বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান কার্যত ধ্বংস এবং চা বাগানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে, এখন অধিকাংশ প্লাবিত এলাকা থেকে নেমেছে জল। জায়গায় জায়গায় কাদা, বালি ও ভুটান পাহাড়ের ডলোমাইট রয়েছে। কোচবিহারের অবস্থাও এক। প্রশাসন সূত্রের খবর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার ৭২টি। এমন পরিবারের সংখ্যা জলপাইগুড়ি জেলায় সর্বাধিক, ২৪ হাজার ৭৩১। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৪ হাজার ৪৪৬টি। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অঙ্ক কষা হচ্ছে। এজন্য ব্লক ভিত্তিক মূল্যায়ন টিম নামানো হয়েছে। এরপর পুনর্গঠনের কাজে হাত দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ত্রাণ শিবির চালু রাখা হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)