জলের তোড়ে ভেসে গেল ‘সুন্দরবন’। না, এটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন নয়। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বোয়ালমারি নন্দনপুর পঞ্চায়েতের অধীন একটা ছোট্ট গ্রাম। ২০০৯ সালে আয়লা বিপর্যয়ের পর পেটের দায়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকা থেকে একদল মানুষ ওই গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। এর থেকেই ওই গ্রামের নাম হয় সুন্দরবন।
প্রবল বর্ষণের জেরে বিপন্ন সেই গ্রাম। সুন্দরবন থেকে আসা বাসিন্দাদের প্রায় একশো ঘর রয়েছে। নন্দনপুর এক নম্বর স্পারে বাস তাঁদের। তিস্তার চরে চাষাবাদ করে দিন গুজরান করেন। কেউ ধান চাষ করেন, কেউবা সবজি ফলান। বিপর্যয়ের জেরে সেসব জলে তলিয়ে গিয়েছে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। সুন্দরবন থেকে জীবিকার সন্ধানে তিস্তার চরে ঠাঁই নেওয়া মানুষগুলো এখন আশ্রয়হীন। মাথাগোঁজার ঠাঁই হারানোয় তিস্তার বাঁধের উপর পলিথিনের ছাউনির নীচে গবাদি পশুর সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে তিস্তার জলে ডুবে গিয়েছে জমির ফসল। ফলে এই পরিস্থিতিতে নিজেদের গ্রামে ফিরে যাবেন নাকি এখানেই রয়ে যাবেন, সেটাই ভেবে উঠতে পারছেন না ওঁরা।
নন্দনপুরে তিস্তার চরে আশ্রয় নেওয়া বিকাশ মণ্ডল বলেন, সুন্দরবনের ঝড়খালিতে বাড়ি। সেখানে বাবা, মা ও ভাই রয়েছে। আমাদের কিছুটা চাষের জমি ছিল। কিন্তু আয়লায় সব নষ্ট হয়ে যায়। পেটের দায়ে কলকাতায় কাজ করতে আসি। একবছর কলকাতায় কাজের পর পরিচিত একজনের সঙ্গে জলপাইগুড়ির নন্দনপুরে আসি। তিস্তার চরে খাস জমিতে চাষাবাদ শুরু করি। পাশেই কোনওমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই মেলে। প্রায় ১০ বছর ধরে স্ত্রী স্বপ্নাকে নিয়ে এভাবেই আছি। তিস্তার চরে ধান, সবজি ফলিয়ে তা বিক্রি করে কোনওমতে দিন গুজরান হয়।
সুন্দরবনের বাসন্তী থেকে পেটের টানে এখানে এসেছেন কৃষ্ণ মণ্ডল, অভিজিৎ রায় ও শৈলেন রায়। কৃষ্ণ বলেন, সুন্দরবনে বাঘের ভয়। আর এখানে ফি বছর তিস্তার রুদ্রমূর্তি। নদীপাড়ে বাস আমাদের। তাই ভাবনা বারোমাস। তিস্তার চরে চাষাবাদ করে কোনওমতে চলছিল। বিপর্যয়ে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। বাঁধে গোরু, ছাগল নিয়ে পলিথিনের নীচে রয়েছি। জল নামলে এক নম্বর স্পারে ঘরে ফিরব। তবে কীভাবে দিন চলবে জানি না। সুন্দরবনেও যে ফিরে যাব, সেখানে গিয়েই বা কী করব? যেটুকু চাষের জমি ছিল, আয়লায় তা শেষ হয়ে যায়।
নন্দনপুর এলাকার বাসিন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জয়শ্রী রায় বলেন, সুন্দরবন থেকে আসা মানুষজন বাস করার সুবাদে জায়গাটির নাম সুন্দরবন হয়ে গিয়েছে। ওইসব মানুষজন মূলত তিস্তার চরে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বিপর্যয়ের জেরে তাঁরা চরম সংকটে পড়েছেন। ঘরদোরে জল উঠে যাওয়ায় তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজস্ব চিত্র