নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: মহানন্দার পলিতে আটকে যাবে পূজার পা? গত শনিবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে মহানন্দার জলস্ফীতিতে পোড়াঝারে ডুবেছে জাতীয় গেমসে পদক জয়ী অ্যাথলিট পূজা প্রামাণিকেরও বাড়ি। কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছে পূজার রানিং শ্যু। টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্রাকসুট সব কাদায় মাখামাখি।
উদ্ধার করা মেয়ের কিছু রানিং শ্যু, গেঞ্জি সব বুধবার সকাল থেকে রোদে শুকোতে ব্যস্ত ছিলেন টুম্পা প্রামাণিক। তিনি বলেন, শনিবার রাতে জল ঢুকেই কোমর সমান হয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড স্রোত। চোখের সামনে মেয়ের খেলার সব জুতো ভেসে যায়। পূজার মেডেলগুলি উপরে থাকায় রক্ষা পেয়েছে। জানি না সামান্য রান্নার কাজ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব কি না। পূজাও আর খেলতে পারবে কি না, বুঝতে পারছি না।
পূজার বাবা অকালে মারা গিয়েছেন। তারপর টুম্পা কিছুদিন রাস্তা নির্মাণের শ্রমিকের পর রাজমিস্ত্রির জোগারের কাজ করেছেন। শরীর দেয় না। তাই রান্নার কাজ করেন। কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন।
এখনও পূজার লড়াই চলছে। ২০২২ সালে জাতীয় গেমসে ৩৫ কিলোমিটার ওয়াকিংয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন পূজা। তার আগে ও পরে জাতীয় এবং রাজ্যস্তরে একাধিক পদক রয়েছে তাঁর। কিন্তু আজও একটা চাকরি মেলেনি। জোটেনি কোনও স্পনসর। এই কঠিন লড়াইয়ের মধ্যেই মহানন্দার ছোবল পূজার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই কঠিন করে তুলেছে। ওভারলোড ট্রেনিংয়ে পা ভেঙেছে। ঘর ভাড়ার খরচ বাঁচাতে বাড়িতে চলে এসেছেন। এখন ফিজিওথেরাপি করছেন।
পূজা চান না তাঁর সঙ্কট, লড়াই, সাফল্য নিয়ে খবর হোক। অভিমানের সুরে বলেন, খবর হলে প্রথম কয়েকদিন আলোচনা হয়। অনেকে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে কেউ কথা রাখেন না। বাইরে থেকে ট্রেনিং করার জন্য ঘরভাড়া, খাওয়ার খরচ বাবদ সামান্য টাকা দেওয়ার স্পনসর পাইনি। আর্থিক সঙ্কটের কারণে লড়াইটা কঠিন। তার মাঝে মহানন্দার ছোবল সব ওলটপালট করে দিয়ে গেল। জাতীয় গেমসে পদক জেতার পর রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল প্রত্যেক পদকজয়ীকে চাকরি দেওয়া হবে। সেদিকেই তাকিয়ে পূজা ও তাঁর মা।