বিধ্বংসী বিপর্যয়ে পাহাড় ও সমতলে বহু পরিবার কার্যত ‘উদ্বাস্তু’। ধসের ধাক্কায় কারও ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন। কিংবা নদীর ছোবলে বসতভিটা হারিয়েছেন অনেকে। এহেন ঘরহারাদের পুনর্বাসন দিতে উদ্যোগী প্রশাসন। তারা এজন্য জমির সন্ধান করছে। একই সঙ্গে গৃহহীনদের তালিকা তৈরির কাজেও নেমেছে। ইতিমধ্যে দুর্যোগ বিধ্বস্ত গ্রামগুলি পরিদর্শনের পর পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গতদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, ঘরবাড়ি নিয়ে ভাববেন না। সরকার পাশে আছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই তৈরি করে দেওয়া হবে।
চারদিন আগে শনিবার বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। যার ফলে, পাহাড়ের বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। মাটি, পাথরের চাঁই পড়ে কিছু বাড়ি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। সেই সমস্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখনও পাহাড়ের ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে। আবার কিছু বাড়ির ভিটের অংশ ধসে গিয়েছে। সেগুলি এখন পাহাড়ের খাদে কার্যত ঝুলছে। ঝোরা ও নদী সংলগ্ন কিছু ঘরবাড়িতে জমেছে বালি, নুড়ি, মাটি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দার্জিলিং জেলার পাহাড়ের তিনটি পুরসভা ও সাতটি ব্লক এলাকায় এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৩ টি। যার মধ্যে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ২৭৮টি। বাকি ১ হাজার ২১৫টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এজন্য জমির প্রয়োজন।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ঘরহারা মানুষদের পুনর্বাসন দিতে জমি জোগাড় করা হবে। এজন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সহযোগিতায় খাস জমির তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে, জমি খোঁজার পাশাপাশি দুর্যোগ বিধ্বস্ত এলাকা ও ত্রাণ শিবির ঘুরে গৃহহীনদের চিহ্নিত করা হবে। এরপর সেই তালিকা ধরেও পুনর্বাসন দেওয়া হবে। শীঘ্রই এই পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, ল্যান্ড ব্যাঙ্ক আগেই তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দিতে সেই তালিকা ধরে আবার সমীক্ষা চালানো হবে।
দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক (বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা) সুরেশকুমার জগৎ বলেন, বিপর্যয়ের জেরে বেশকিছু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। বিষয়টি নজরে এসেছে। সমগ্র বিষয় গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু দার্জিলিং নয়, বিপর্যয়ে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলাতেও প্রচুর মানুষ ঘর হারিয়েছেন। সমতল এলাকার অধিকাংশ মানুষের বাড়ি গ্রাস করেছে নদী। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, শীঘ্রই গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। খাসজমি জোগাড় করে বাংলার বাড়ি কিংবা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ওই বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হতে পারে। এব্যাপারে যা করার রাজ্য সরকারই করবে। ভিজে যাওয়া বই শোকানোর চেষ্টা। - নিজস্ব চিত্র।