• টোটোর বদলে রেজিস্টার্ড ই-রিকশ, দুর্ঘটনা এড়াতে নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: শহর থেকে গ্রামের রাস্তায় টোটো তুলে দেওয়ার পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। তার পরিবর্তে ই-রিকশয় জোর দেওয়া হচ্ছে। যার সরকারি রেজিস্ট্রেশন থেকে লাইসেন্স–সবকিছুই থাকবে। সময়মতো রাজস্বও দিতে হবে। চালকদের নির্দিষ্ট রুট বাতলে দেওয়া হবে। মূলত রাজ্য ও জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেইমতো তোড়জোড় শুরু হয়েছে নদীয়া জেলাতেও। ইতিমধ্যেই জেলার প্রায় ১২০০ ই-রিকশর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।

    জেলার তরফে বিভিন্ন টোটো চালক সংগঠন ও প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা চলছে। ভবিষ্যতে ব্লকভিত্তিক ই-রিকশ কোন রুটে চলবে তা ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকেই নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি, রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়কে টোটোর দৌরাত্ম্যে পুরোপুরি লাগাম টানার পথে হাঁটছে সরকার। এমনকী, জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে পারাপারও করা যাবে না। কোনও এলাকায় এই ধরনের ক্রসিংয়ের একান্ত প্রয়োজন পড়লে তারজন্য আলাদা নিয়ম জারি হয়েছে‌। সেই ক্রসিং ৩০মিটারের মধ্যে হতে হবে। দু’টি ক্রসিংয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব ২ কিমি হতে হবে। সেইসঙ্গে গ্রামের টোটো চালকরা শহরে যাতে না ঢোকেন, তা নিয়েও প্রশাসন কড়া হচ্ছে। নদীয়া জেলা পরিবহণ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ই-রিকশ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যাঁরা টোটো চালান, তাঁদের গাড়িগুলিকে ই-রিকশয় রূপান্তরিত করতে হবে। সেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন থাকবে। পাশাপাশি, নির্ধারিত রুট ধরেই তাঁদের টোটো চালাতে হবে।

    প্রসঙ্গত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টোটো চালকরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে হাইওয়েতে চলে আসছেন। ছোট ও হালকা গাড়ি হওয়ায় ভারী যানবাহনের সঙ্গে গতি মেলাতে না পেরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষত রাতে টোটোতে আলো না থাকা, লাইসেন্সবিহীন চালক এবং অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। কৃষ্ণনগর-চাপড়া, রানাঘাট-শান্তিপুর এবং বেথুয়াডহরি-নাকাশিপাড়া রাজ্য সড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় প্রতিদিনই টোটো চলাচল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইন অনুযায়ী জাতীয় ও রাজ্য সড়কে টোটো চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও নিয়ন্ত্রণের অভাবে অনেক টোটো চালক সেই নিয়ম মানছেন না।টোটো এবং ই-রিকশর মধ্যে মূল পার্থক্য হল-টোটো সাধারণত অবৈধভাবে চলাচলকারী একটি বাহন। ই-রিকশ একটি বৈধ ও আইনসম্মত গাড়ি, যা সম্পূর্ণভাবে সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলে। ই-রিকশ পরিবেশবান্ধব এবং টোটোর তুলনায় বেশি গতিশীল ও নিরাপদ। তাই প্রশাসনের তরফে ই-রিকশয় জোর দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে ভাড়া খাটিয়ে টোটো চালানোর ব্যাপারেও নিয়ন্ত্রণ আনা হচ্ছে। অর্থাৎ, একজন মালিক শুধু নিজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ই-রিকশ চালাতে পারবেন। সম্প্রতি রাজ্য থেকে এই যানবাহনের রুট নির্ধারণ করে দিতে বলা হয়েছে। সেগুলি রাজ্য সড়ক কিংবা জাতীয় সড়ক বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় গ্রাম ও শহরের ভিতর দিয়ে চলাচল করবে। গ্রামের ক্ষেত্রে সেই রুট সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার। 

    শহরের ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ ৬ কিলোমিটার হবে।‌ গ্রামের ক্ষেত্রে যাত্রীকে অন্ততপক্ষে ১০০ মিটার এবং শহরের ক্ষেত্রে ২০০ মিটার দূরে গিয়ে নামাতে হবে। যদিও এই নিয়ে নিয়মের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। মূলত ‘লাস্টলাইন কানেক্টিভিটি’র কথা মাথায় রেখেই এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)