নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: স্ত্রী ও শিশুপুত্রের গলা করাত দিয়ে কেটে খুন করে আত্মঘাতী স্বামী। বুধবার ভোররাতে নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বেগুনবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আণ্ডিরণ হালদারপাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দাম্পত্য কলহের জেরে এদিন ভোরে প্রথমে স্ত্রীর গলায় করাত চালিয়ে মেরে ফেলে সঞ্জিত হালদার (৪২) নামে এক ব্যক্তি। মায়ের আর্তচিৎকারে জেগে যায় শিশুপুত্রটি। তার গলাও সঞ্জিত কেটে দেন করাত দিয়ে। ঘটনাস্থলেই নিথর হয়ে যান মা মৌসুমি হালদার (২৮) ও তাঁদের পুত্র রায়হান হালদার (৭)। পরে সঞ্জিত গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। জানা গিয়েছে, সঞ্জিত পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে মাছও ধরতেন। সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন ছিল।
এদিন সকালে সঞ্জিতের মা বাথরুমে যাওয়ার সময়ে জানলা দিয়ে দেখতে পান, ছেলে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। ঘরে ঢুকেই তিনি আঁৎকে ওঠেন। দেখতে পান খাটের ধারে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন পুত্রবধূ। মেঝের উপরেই গলা কাটা অবস্থায় পড়ে আদরের নাতি। বৃদ্ধা চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। তাঁরা দরজা খুলে তিনজনের দেহ উদ্ধার করেন। সঞ্জিতের দেহ ঘরের সিলিং থেকে ঝুলছিল। স্ত্রী ও ছেলের গলা কাটা দেহ পড়েছিল মেঝেতে। সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বেলডাঙা থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দেহগুলিকে ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। দাম্পত্য কলহ ছাড়া এই নৃশংস ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা, তার তদন্ত শুরু করেছে বেলডাঙা থানার পুলিশ।
এসডিপিও উত্তম গড়াই বলেন, ভোরের দিকে এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের অনুমান। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রথমে তাঁর স্ত্রী মেরেছেন। তারপর ছেলেকে খুন করে নিজে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। আমরা একটি খুনের মামলা রুজু করে ঘটনা তদন্ত শুরু করেছি। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি কেন নৃশংসভাবে খুন করল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
তবে সঞ্জিতের মা জানিয়েছেন, বউমার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। বউমা খুব অশান্তি করত। সকালে ওদের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাই। ঘরে ঢুকতেই দেখি বউমা ও নাতির গলাকাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমি কি করব বুঝতে না পেরে চিৎকার করে পাড়া-প্রতিবেশীদের ডেকেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল হালদার বলেন, প্রায়দিনই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হতো। তবে এদিন এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে যাবে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। এদিন সকালে বাড়ির আশেপাশের সবাই চিৎকার করে কাঁদছে। এই শব্দ শুনে আমরা এসেছি। তখনও ওদের ঘরের ফ্যানের আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। ফ্যান খারাপ হওয়ায় খুব আওয়াজ হয়। সেজন্য ভোররাতে এত কিছু ঘটল আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। ওরা পুজোতেও স্বামী-স্ত্রী ও বাচ্চা একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। হঠাৎ কি এমন হল, বুঝতে পারছি না।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বন্দিতা হালদার বলেন, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অনেকদিন ধরেই অশান্তি চলছিল। কিন্তু এরকম নৃশংস ঘটনা ঘটবে, আমরা ভাবতেই পারিনি। স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলার মাঝখানে পড়ে নিষ্পাপ শিশুর এই পরিণতি হল। ভোরে ঘোর ঘুমের মধ্যে যখন সবাই, তখন এরকম ঘটনা ঘটে গেছে বলে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। -বেলডাঙায় খুন ও আত্মহত্যার ঘটনায় শোকার্ত পরিবার।