• কান্দির দোহালিয়ার মাটির প্রদীপের চাহিদা তুঙ্গে
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কান্দি: এক সময় কাঠের চাকা ঘুরিয়ে তৈরি করতে হতো মাটির প্রদীপ। তবে সেদিন গিয়েছে, কম সময়ে বেশি প্রদীপ তৈরি করতে এসে গিয়েছে মেশিন। তাই এবার বাজার ছেয়ে যাওয়া এলইডি বাল্বকে টেক্কা দিচ্ছে কান্দির দোহালিয়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের তৈরি মাটির প্রদীপ। দীপান্বিতা কালীপুজোর আগে এই প্রদীপের চাহিদা কিন্তু তুঙ্গে।

    বহুবছর ধরেই কান্দির দোহালিয়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের তৈরি মাটির প্রদীপের চাহিদা রয়েছে। শুধু কান্দি মহকুমা নয়, শিল্পীদের তৈরি প্রদীপগুলি মুর্শিদাবাদের বড় একটি অংশ বাদে বীরভূমেরও বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যায়। বাড়তে থাকা খদ্দেরের চাহিদা মেটাতে দীপান্বিতা কালীপুজোর প্রায় তিনমাস আগে থেকেই প্রদীপ বানাতে শুরু করেছেন শিল্পীরা। 

    তাঁরা জানান, আগে কাঠের চাকা ঘুরিয়ে তৈরি হতো মাটির প্রদীপ। তাতে পরিশ্রম থাকলেও উৎপাদন বেশি করা যেত না। তবে এখন এই শিল্পে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। মোটরের মাধ্যমে যান্ত্রিক চাকা ঘুরিয়ে উৎপাদনে গতি আনা হয়েছে। মৃৎশিল্পী বাবুসোনা পাল বলেন, মাটির প্রদীপের ঐতিহ্য কখনও হারাবে না। যে কারণে এই প্রদীপের চাহিদা এখনও রয়েছে। আমরা এলইডিকে টেক্কা দিতে পেরেছি। কিন্তু লাভের অঙ্ক বাড়েনি। পরিশ্রম অনুযায়ী একাজে আরও লাভ দরকার। প্রদীপ তৈরিতে শুধু বাড়ির পুরুষরাই নন, পরিবারের মহিলারাও সাহায্য করে চলেন। কাঁচা প্রদীপ রোদে শুকাতে দেওয়া ছাড়াও ভাটি সাজানোর কাজ মহিলারাও করেন। দোহালিয়া গ্রামে দীপান্বিতা কালীপুজোর আগে কার্যত গোটা পরিবারের লোকজন নেমে পড়েন একাজে। অনিমা পালের কথায়, লাভ কম হলেও তা পুষিয়ে যায়। কারণ বাড়ির পুরুষ, মহিলা থেকে ছোট, বড় সবাই উৎপাদনে হাত লাগান।

    প্রদীপ শিল্পী সাধনা পাল জানান, আগের মতো হাতে তৈরি করতে হলে আজকের যুগে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা যেত না। যন্ত্রের ব্যবহার এই শিল্পকে শুধু বাঁচিয়ে রেখেছে তাই নয়, পরিবারের অন্নের জোগানও দিয়েছে।

    বরাবরের মতো এবছরও শিল্পীরা ছোট, বড় থেকে মাঝারি মাপের প্রদীপ তৈরি করছেন। এর বাইরেও রঙীন, চর্তুমুখী ও পঞ্চমুখী প্রদীপ তৈরি হচ্ছে। সাধারণত, ২ টাকা প্রতি পিস থেকে শুরু করে ১০ টাকা দরে বিকোচ্ছে দীপান্বিতা কালীর মাটির প্রদীপ। 

    মৃৎশিল্পী সন্তোষ পাল বলেন, আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই শিল্পীকেও ধরে রেখেছি আমরা। আমি যেমন বাবা, দাদার কাছে কাজ শিখেছি। তেমনি নিজের ছেলেকেও এই শিল্প শিখিয়ে যাব।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)