• দুর্গাপুজোয় লক্ষ্মীলাভ, উৎসবে মাতল পিংলার পটগ্রাম
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • রাজদীপ গোস্বামী, মেদিনীপুর :

    দুর্গাপুজোর উৎসবে যখন সবাই মাতোয়ারা তখন ওঁদের কর্মব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। কখনও রাস্তার ধারে, আবার কখনও মণ্ডপের পাশে বসেই পটশিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন নানা ধরনের শিল্পকলা। বিক্রিও হয়েছে দেদার। তাতে লক্ষ্মীলাভ ভালোই। ফলে পুজোর পর উৎসবে ফিরেছে পিংলার পটশিল্পীদের গ্রাম। জানা গিয়েছে, এ বছর শিল্পীদের তৈরি জিনিস বিক্রির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৩০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। চাওড়া হাসি সবার  মুখে। শিল্পীদের কথায়, নয়া গ্রামে প্রায় ৩০০ জন পটশিল্পী বাস করেন। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন শিল্পীরা। ঠাকুর দর্শন করতে এসে বহু মানুষ পটশিল্পের জিনিস কিনে নিয়ে গিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকজন শিল্পী দিল্লির হাটে গিয়েছেন। তাঁদের তৈরি জিনিসও বিপুল পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। 

    বুধবার পটশিল্পী বাহাদুর চিত্র করের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘পটশিল্পের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামের মানুষ হস্তশিল্পের কাজ তুলে ধরেছেন। বিক্রি বেশ ভালই হয়েছে। আবার অনেকে মণ্ডপ সজ্জার কাজও করেছেন। কালীপুজোতেও বিক্রি ভালো হবে বলে আশা করছি।’ 

    মেদিনীপুর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পিংলার নয়া গ্রাম। এই গ্রামের শিল্পীদের কয়েকশো বছরের ইতিহাস রয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে গ্রামবাসীরা রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডীমঙ্গল, নানান দেবদেবীর ছবি পটশিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। গ্রামের প্রতিটি ঘরের মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। পিছিয়ে নেই গ্রামের শিশুরাও। এক শিল্পীর কথায়,  ‘এবছর খাদির কাপড়ের উপর পটের কাজ করা মেয়েদের ওড়না, টি-শার্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল।  এছাড়াও কাঁসার থালা, ট্রে, কেটলি, ছাতা, কুলো থেকে বেতের তৈরি ছোট ছোট বাক্সের উপর পটের কাজ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। এছাড়াও বহু মানুষ গ্রামে এসে জিনিস কিনে নিয়ে গিয়েছেন। চায়ের কাপ, হাত পাখার ব্যাপক পরিমাণে বিক্রি হয়েছে।’পটশিল্পী মুস্তফা চিত্রকর ও সোনিয়া চিত্রকররা পটের শিল্পসৃষ্টি বিক্রি করতে কলকাতায় গিয়েছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, ‘কলকাতায় লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় চারিপাশ ডুবে গিয়েছিল। দেশপ্রিয় পার্কের অবস্থাও করুণ ছিল। কিন্তু জল নেমে যাওয়ায় বিক্রি করতে পেরেছি। বিক্রি ভালোই হয়েছে। তবে, বৃষ্টি না  হলে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়ত।’ মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া বলেন, ‘গত কয়েক বছরে এই গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক পরিকাঠামোর বদল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পীদের পাশে সব সময় রয়েছেন। কলকাতার বিভিন্ন মেলাতেও শিল্পীরা যান।’-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)