• হাফ দামে আসবাব! টোপ দিয়ে প্রতারণা, কোলাঘাটে অফিস বন্ধ করে চম্পট অভিযুক্তরা
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রায় অর্ধেক দামে, এসি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, সোফা, বেড বিক্রির টোপ দেওয়া হয়েছিল। বহু মানুষ তা কিনতে আগ্রহী হয়। এভাবে প্রায় তিন কোটি টাকা তুলে অফিসে ঝাঁপ ফেলে চম্পট দিল তামিলনাড়ুর চার ব্যক্তি। কোলাঘাট থানার বুড়ারি বাজারে মেচেদা-হলদিয়া রাজ্য সড়কের ধারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ভিন রাজ্যের লোকজন এই প্রতারণা করে। অন্তত ৫০০-৬০০ লোক প্রতারিত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এনিয়ে কোলাঘাট থানায় এফআইআর হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বাড়ির জিনিস বিক্রির নামে প্রতারণার ঘটনায় এলাকায় হইচই পড়ে গিয়েছে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আগস্ট মাসে বুড়ারি বাজারে শেখ আব্দুল মাজেদের বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে তামিলনাড়ুর চার ব্যক্তি ঘরোয়া পণ্য সাপ্লাই দেওয়ার ব্যবসা শুরু করে। নমুনা হিসেবে টিভি, ফ্রিজ, আলমারি, ওয়াশিংমেশিন, সোফা, মোবাইল, ল্যাপটপ, মিক্সার, বাসন রাখা ছিল। বাজারমূল্য কিংবা অনলাইনে কেনাকাটা মূল্যের তুলনায় ৪৫-৫০শতাংশ ছাড়ে ওইসব জিনিস সাপ্লাই করা হবে বলে ওই সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়। ডেলিভারি পাওয়ার জন্য অন্তত ১৫দিন আগে সম্পূর্ণ টাকা অ্যাডভান্স দেওয়ার শর্ত ছিল। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দে অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে দেন। কেউ দেড় দু’লক্ষ, কেউবা ৫০হাজার কিংবা ২৫হাজার টাকা পেমেন্ট করে নিজেদের পছন্দের জিনিস অর্ডার দিয়ে ছিলেন। এভাবে প্রায় ৫০০-৬০০জনের অগ্রিম টাকা জমা পড়তেই ৪অক্টোবর অফিসে তালা ঝুলিয়ে তামিলনাড়ুর ওই চার ব্যক্তি চম্পট দেয়।

    অফিসে তালা পড়ার ঘটনা জানাজানি হতেই মঙ্গলবার বুড়ারি বাজারে উত্তেজনা ছড়ায়। ভাড়াবাড়ির সামনে বিক্ষোভ চলে। দোতলা বিল্ডিংয়ে অফিস খুলে বড় বড় হোর্ডিং টাঙিয়ে জিএসটি নম্বর বসিয়ে এভাবে প্রাতরণা হবে বলে ভাবতেও পারেননি মহম্মদ রফি, সেলিম খান, সাদ্দাম হোসেন খানরা। বুড়ারি গ্রাম কমিটির সদস্য সেলিম খান বলেন, ১৫দিন আগে অগ্রিম দিলে অনলাইন কিংবা বাজারমূল্যের থেকে অর্ধেক দামে জিনিস সরবরাহ করার আশ্বাস দিয়েছিল। অফিস খোলার পর প্রথম ১৫দিন কয়েকজনকে ওইসব সামগ্রী সরবরাহ করে তারা ভরসার জায়গা তৈরি করেছিল। তারপর একসঙ্গে ৫০০-৬০০জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে। এখানকার ভাড়াবাড়ির মালিক জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীরা তাঁদের পরিচিত। স্বাভাবিকভাবে জনরোষ তৈরি হয়েছে। আমরা প্রশাসনের উপর ভরসা রেখেছি।

    সাদ্দাম হোসেন খান বলেন, আমি বেশকিছু সামগ্রী নেওয়ার জন্য দেড় লক্ষ টাকা অ্যাডভান্স দিয়েছি। এখন অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। একই বক্তব্য মহম্মদ রফির। সোফা ও ফ্যান কেনার জন্য তিনিও অগ্রিম দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।

    তমলুক, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া সহ বিভিন্ন জায়গার মানুষ ওই প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে অগ্রিম বাবদ টাকা দিয়েছে। এককালীন ৫০০-৬০০জনের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে তামিলনাড়ুর ওই চার ব্যক্তি চম্পট দিয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি পরিতোষ সাঁতরা বলেন, বুড়ারি বাজারটি শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক এবং কোলাঘাট থানার মধ্যে পড়ে। আমাদের ব্লকের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ঠকেছে। 

    ভিন রাজ্য থেকে এসে অভিনব উপায়ে প্রতারণার জাল বিছিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই, পুলিশ ওই ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)