বর্ধমান পুরসভায় অর্থ তছরুপ-কাণ্ড: মহারাষ্ট্রের দু’টি স্বর্ণবিপণির নামে ইস্যু করা হয়েছিল চেক
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বর্ধমান পুরসভার চেক মহারাষ্ট্রের দু’টি স্বর্ণবিপণির নামে ইস্যু করা হয়েছিল। চেক জমা করার পর ব্যাঙ্ক থেকে হিসাবরক্ষক সমীর মুখোপাধ্যায়ের কাছে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। তারপরই চেক ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয় বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি। ২০২৪ সালে পুরসভার আর্থিক বিষয়টি হিসাবরক্ষকই দেখত। ব্যাঙ্কে যে নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেটি তার কাছেই থাকত। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা বা তোলা হলে সেই মোবাইল নম্বরে মেসেজ যেত। অনেক সময় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক থেকেও ফোন করা হতো। সেরকমই দু’টি চেক ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার আগে তার নম্বরে ফোন করা হয়। মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ নাগপুরে নিয়ে গিয়েছে।
বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, তিনি আমাদের বিশ্বস্ত। তাঁর কাছে ব্যাঙ্ক থেকে কোনও ফোন আসেনি। চেক ক্লোন করা হয়েছিল। ব্যাঙ্কের উচিত ছিল চেকের সই ভালোভাবে পরীক্ষা করা। সেটা তারা করেনি। তাছাড়া, যে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর হয়েছিল, সেটা আমরা পেয়ে গিয়েছি। ওই আধিকারিকের পরিবারের লোকজনদের দাবি, শুধু চেক নয়, তার মোবাইল নম্বরও ক্লোন করা হয়েছিল। সে এই ঘটনায় যুক্ত নয়। পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে দু’টি চেক ব্যাঙ্কে জমা করা হয়েছিল। একটি চেকে ৪৮ লক্ষ ২১ হাজার টাকা তোলা হয়েছিল। অন্য আরেকটি চেক থেকে ৯৭ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা হস্তান্তর করা হয়। টাকা হস্তান্তর হওয়ার পর বিষয়টি পুরকর্তৃপক্ষ জানতে পারে। তাদের দাবি, চেক দু’টি পুরসভাতেই ছিল। অথচ একই নম্বরের চেক থেকে টাকা হস্তান্তর করা হয়। চেকে সই নকল করা হয়েছিল। অভিযোগ জানানোর পর ব্যাঙ্ক টাকা ফেরৎ দেয়। কিন্তু মহারাষ্ট্র সাইবার ক্রাইম থানায় তারা অভিযোগ করে। নাগপুর থেকে টাকা তোলা হয়েছিল। সেই কারণে সেখানকার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা মহারাষ্ট্রে অভিযোগ করেন। এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মহারাষ্ট্র থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে। ওই হিসাবরক্ষককেও ডেকে জেরা করা হয়। কথায় অসঙ্গতি থাকায় তাকে ফের ডাকা হতে পারে বলে জানানো হয়। তারপরই মহারাষ্ট্র পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই আধিকারিকের সহযোগিতাতেই টাকা তছরুপ করা হয়। তাকে হেপাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন ছিল। সেই কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। বেশ কয়েকটি টেকনিক্যাল বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। ওই হিসাবরক্ষক দাবি করেছিল, চেক ক্লিয়ারেন্সের জন্য তার কাছে ফোন আসেনি। এই দাবি কতটা সত্য, তা তাকে হেফাজতে নিয়ে জানা হবে। ব্যাঙ্কের গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রতীকী ছবি