নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ডাকাতির পর ইএম বাইপাস সংলগ্ন এক পাঁচতারা হোটেলে ‘পার্টি’ করেছিল বরানগর সোনা লুট কাণ্ডের পান্ডা সঞ্জয় মাইতি। সোনা লুটের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেতাদুরস্ত পোশাকে নোটের কাঁড়ি কাঁড়ি বান্ডিল নিয়ে ধাপা এলাকার ওই পাঁচতারা হোটেলে উঠেছিল সঞ্জয়। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বিদেশি ব্র্যান্ডের ‘সিঙ্গল মল্ট’ আকণ্ঠ পান করেছিল সে। পরে নিউটাউনের গেস্ট হাউসে বন্ধু ও বান্ধবীকে ডেকে ‘মজলিশ’ জমিয়েছিল। পুলিশ যখন গ্রেফতার করে, তখন সম্পূর্ণ অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিল সঞ্জয়। যে টাকার বান্ডিলগুলি নিয়ে সঞ্জয় পাঁচতারা হোটেলে উঠেছিল, তা লুটের গয়না বিক্রি বাবদ আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী পাঁচু সামন্তের থেকে মেলা ‘অ্যাডভান্স’।
পুলিশ ধৃতদের জেরা করে জেনেছে, জেলবন্দি বিহারের দুষ্কৃতী তথা ‘মেন্টর’ রাজেশ দাসের পরামর্শ মেনেই বড়সড় অপারেশনের ছক কষেছিল সঞ্জয়। তার টার্গেট ছিল, সোনার হোলসেল দোকান বা গয়না তৈরির কারখানায় ডাকাতি। যাতে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায়। সেইমতো বেদিয়াপাড়ার বাড়ি লাগোয়া বরানগর ও সিঁথি এলাকার সোনাপট্টিতে কয়েক মাস ধরে সে রেকি চালিয়েছিল। এছাড়া বউবাজার চত্বরের সোনাপট্টিতেও কয়েকবার রেকি করে। তিনটি এলাকা রেকি করার পর তুলনামূলক কম নিরাপত্তা থাকা বরানগরের শংকর জানার দোকানকে বেছে নিয়েছিল। এরপর ঘনিষ্ঠ শাগরেদ সুরজিৎ শিকদারকে একমাস আগে ওই দোকানে নগদ টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিল গয়না কিনতে। পরিকল্পনা মাফিক সুরজিৎ ওই দোকানে সিসি ক্যামেরা কোথায় আছে, সেসব দেখে আসে।
তদন্তকারীরা বলছেন, লুটের গয়না পাঁচু সামন্তকেই যে বিক্রি করা হবে, তা আগে থেকেই চূড়ান্ত করা ছিল। লুটের পরই তাই সঞ্জয় প্রায় তিন কেজি সোনা পাঁচুকে বিক্রি করেছিল। প্রথম দফায় মেলে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। এরপর অ্যাপ ক্যাব ভাড়া করে পৌঁছে যায় পাঁচতারা হোটেলে। এরপর পার্টি এবং পরে আগে থেকে বুক করে রাখা নিউটাউনের গেস্টহাউসের মজলিশে দেদার ফূর্তি। শনিবার রাত থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত চলে হল্লোড় আর মদ্যপান। পুলিশ জেনেছে, ডাকাতির ঘটনায় জামশেদপুর থেকে ধৃত চন্দন মণ্ডল ও প্রিন্স কুমার ‘আনকোরা’ ছেলে। বরানগরের দোকানে ডাকাতির মধ্যে দিয়েই কার্যত এই লাইনে ‘হাতেখড়ি’ হয়েছিল। ওই দু’জনকে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছিল সঞ্জয়। বখরার টাকায় চন্দন নতুন মোবাইল ফোনও কিনেছিল।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, শনিবার দুপুরে বরানগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে হওয়া ওই ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত মূল ষড়যন্ত্রকারী সঞ্জয় মাইতি সহ মোট পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে জামশেদপুর থেকে ধৃত চন্দন ও প্রিন্সকে বুধবার বারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক দু’জনকে সাতদিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় আরও দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তাদের মধ্যে একজন বিহারের ও অপরজন এই রাজ্যের বাসিন্দা।
তদন্তকারীদের কাছে ধৃতরা জানিয়েছে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে খুনের পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু লঙ্কার গুঁড়ো ছেটানোয় তা শংকর জানার নাকে-মুখে ঢুকে যায়। তিনি চিৎকার করে ওঠেন। সেই চিৎকার আটকাতে প্রথমে শংকরবাবুর গলা চেপে ধরা হয়। এরপর তাঁকে কাবু করতে মাথায় লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করাতেই শংকরবাবুর মৃত্যু হয়। বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলিধর শর্মা বলেন, বাকি দুই দুষ্কৃতী ও লুট হওয়া সোনার খোঁজে তল্লাশি চলছে। আশা করছি, দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।