হোটেলঘর ভাড়া নিয়ে ৩ দিন ডিজিটাল অ্যারেস্ট, উধাও ১ কোটি
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: হঠাৎ ‘পুলিশ আধিকারিক’-এর ফোন! রিসিভ করেই চমকে উঠলেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। অপর প্রান্ত থেকে তখন অভিযোগের পর অভিযোগ। তাঁর সিমকার্ড ব্যবহার করে অবৈধ বিজ্ঞাপন ছড়ানো হয়েছে। এমনকি, বৃদ্ধ যুক্ত রয়েছেন মানব পাচারেও! তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের ‘নির্দেশিকা’ পর্যন্ত পাঠানো হয়। তদন্তে সহযোগিতা না করলে ২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হয়। তদন্তের জন্য তাঁকে হোটেলে ডেকেও পাঠায় ‘পুলিশ’। সেই মতো নিউটাউনে তিনদিন একটি অভিজাত হোটেল ভাড়া নেন বৃদ্ধ। কিন্তু আসেননি কেউ। ভিডিও কলেই এগোয় ‘তদন্ত’! সাত দফায় তিনি এক কোটি টাকা দিয়ে ফেলেন। নথিপত্র যাচাইয়ের পর সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এক টাকাও ফিরে না পেয়ে বৃদ্ধ বুঝতে পারেন, প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টে’র শিকার হয়েছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারিত বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। নারায়ণপুর থানার রাজারহাটের একটি আবাসনে থাকেন তিনি। গত ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর কাছে প্রথম ফোন আসে। প্রতারকরা বেঙ্গালুরু পুলিশের কর্তা বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। একটি মোবাইল নম্বরের কথা উল্লেখ করে বলে, ‘আপনার এই নম্বর থেকে অবৈধ বিজ্ঞাপন ছড়ানো হয়েছে। সিমকার্ড কেনা হয়েছে বেঙ্গালুরু থেকেই।’ বৃদ্ধ তখন জানান, তিনি কোনও সিমকার্ড বেঙ্গালুরু থেকে কেনেননি। তখন তাঁকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, কলটি বেঙ্গালুরুর ক্রাইম ব্রাঞ্চে ‘ট্রান্সফার’ করা হচ্ছে। অন্য এক প্রতারক তখন বলে, ‘আপনার বিরুদ্ধে মানব পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে আপনার আধার কার্ড ব্যবহার করে মুম্বইয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে মানব পাচারের টাকা লেনদেন হয়েছে।’ প্রমাণ হিসেবে বৃদ্ধকে থেকে একটি ভুয়ো স্ক্রিনশটও পাঠানো হয়। তারপর সুপ্রিম কোর্টের ভুয়ো নির্দেশিকাও হোয়াটসঅ্যাপ করে দেয় প্রতারকরা। বৃদ্ধকে জানানো হয়, তদন্তে সহযোগিতা না করলে গ্রেফতার করা হবে ২ ঘণ্টায়। প্রতারকরা তাঁকে আরও জানান, বিষয়টির সঙ্গে নাকি জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত রয়েছে! তাই মুখোমুখি জেরা করতে হবে। তার জন্য আধার এবং প্যান কার্ড নিয়ে পরদিনই স্থানীয় কোনও হোটেলে আসতে বলা হয় তাঁকে।
সেই মতো ৯ সেপ্টেম্বর তিনি নিউটাউনের একটি হোটেলে রুম বুক করেন। সেখানে গিয়ে দেখেন, কেউ আসেনি। তবে তদন্তের নামে প্রতারকরা তাঁকে ভিডিও কল করে। তারপর বিভিন্ন অজুহাতে টাকা পাঠাতে বলে। প্রতারকরা তাঁকে জানায়, সমস্ত টাকা ২৭ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে ফেরত চলে যাবে। ২৯ সেপ্টেম্বর কেস ‘ক্লোজ’ হয়ে যাবে। তিনদিন হোটেলে থাকাকালীন প্রথমে দু’দফায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার এবং পরে আরও এক দফায় ৪০ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ছ’দফায় প্রায় ৫৮ লক্ষ দেন। অর্থাৎ, মোট ১ কোটি ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ফেলেন প্রতারকদের। কিন্তু, ২৭ তারিখ পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত আসেনি। তারপরই সোমবার নারায়ণপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।