• খগেন মুর্মুর রক্তাক্ত মুখ ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • উত্তরবঙ্গে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তবে ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের হলেও, সেটিকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রচারের নতুন কৌশল নিয়েছে বিজেপি। আক্রান্ত সাংসদ খগেন মুর্মুর রক্তাক্ত মুখের ছবি এখন দলের প্রচারের মূল উপকরণে পরিণত হয়েছে। জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতির আবেগকে হাতিয়ার করে বিজেপি এবার তৃণমূলের পাশাপাশি গোটা ‘ইন্ডিয়া’ জোটকেই ‘জনজাতি বিরোধী’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে।

    গত সোমবার নাগরাকাটায় ত্রাণ দিতে গিয়ে খগেন মুর্মু ও শঙ্কর ঘোষ আক্রান্ত হন। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে। সাংসদের মুখে গভীর আঘাত লাগে, যা পরে প্রচারের প্রধান ছবি হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে খগেনের সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করলেও, দোষীদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় তৃণমূলের উপর চাপ বাড়িয়েছে বিজেপি।

    রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য মঙ্গলবারই স্পষ্ট করে দেন, ‘এটা শুধুমাত্র এক সাংসদের উপর হামলা নয়, এটা জনজাতি সমাজের উপর হামলা।’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে একই সুরে বলেন, ‘তৃণমূলের দাপটে আজ জনজাতি নেতারাও নিরাপদ নন।’

    এদিকে, বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বও এই ঘটনাকে সর্বভারতীয় ইস্যু বানাতে কোমর বেঁধে নেমেছে। খগেন মুর্মুর রক্তাক্ত মুখের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল পোস্টার ইতিমধ্যেই প্রচারে এসেছে। বাংলায় লেখা পোস্টারে দেখা যাচ্ছে খগেনের রক্তাক্ত মুখের পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, তার নিচে লেখা— ‘ছিঃ! রক্তপিপাসু তৃণমূলের রোষানলে জনজাতিরাও!’ বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য এই পোস্টার প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী ও বামেদের কাছে জনজাতি জীবনের কোনও মূল্য নেই কি?’

    রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, বিজেপি এখানে দ্বিমুখী লক্ষ্য নিয়েছে। এক, জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। দুই, কংগ্রেস ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মতো জনজাতি ভোট নির্ভর দলগুলিকে অস্বস্তিতে ফেলা। কারণ, এই হামলার নিন্দা না করলে ‘জনজাতি প্রীতি’র প্রশ্ন উঠবে। আর নিন্দা করলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ঐক্যেই ফাটল ধরবে।

    ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্যের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই ইস্যুকে বড় করে তুলতে চাইছে বিজেপি। উত্তর মালদহের এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের জনজাতি ভোটারদের মনেও প্রভাব ফেলতে চাইছে দলটি। কারণ, খগেনের আসন সীমান্তবর্তী এলাকার। এই অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতি বহু ক্ষেত্রে একসূত্রে গাঁথা।

    রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনজাতি ভোটে ফের দখল নিতে বিজেপি যে খগেন মুর্মুর রক্তাক্ত ছবিকেই প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখন দেখার, তৃণমূল কীভাবে এই আক্রমণ মোকাবিলা করে। রক্তাক্ত রাজনীতির পাল্টা হিসেবে ‘সহানুভূতির প্রচার’ নাকি ‘আইনি কঠোরতা’!
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)