• উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ নিয়ে কেন্দ্রকে কড়া আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • উত্তরবঙ্গের তীব্র বৃষ্টি ও ধসের কারণে সৃষ্টি হওয়া মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ বাড়ল। বুধবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে কড়া আক্রমণ শানালেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু এ ধরনের ভয়ানক অবহেলা আগে কখনও দেখিনি। দেশকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

    তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের জন্য টাকা আছে, ত্রাণের জন্য টাকা নেই — এটাই এই সরকারের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগের সময়ও তারা রাজনীতির কুৎসা চালাচ্ছে।’ এদিন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক নির্দেশিকাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কমিশন কি সত্যিই নিরপেক্ষ? নাকি বিজেপির স্বার্থে কাজ করছে?’

    মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অমিত শাহকে নিশানা করে বলেন, ‘সব বিষয়ে ওঁর কথা শোনা উচিত নয়। বেশি বিশ্বাস করলে পরিণতি হতে পারে মীরজাফরের মতো।’ এদিকে মোদীর উদ্দেশে তিনি মন্তব্য করেন, ‘আমি বলব, অমিত শাহ থেকে সাবধান থাকুন।’ তিনি রাজ্যের এসআইআর নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘কমিশন বলছে ১৫ দিনের মধ্যে এসআইআর করতে হবে! কমিশন কি বিজেপির অধীনে নাকি? আসলে সবটাই চলছে অমিত শাহের নির্দেশে। যেন অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার!’

    প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘মানুষের দুর্দশার সময় এই জলছাড়া কেন?’ এদিন বন্যাকবলিত নাগরাকাটায় আহত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর বিষয়ে সংবেদনশীল মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখে এসেছি। আরোগ্য কামনা করেছি। আমি আমার কর্তব্য করছি।’ তবে একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, ‘বন্যার সময়ে দুর্গত এলাকায় ৩০-৪০টি গাড়ি নিয়ে যাওয়া কি ঠিক ছিল?’

    ত্রিপুরায় তৃণমূল নেতাদের উপর হেনস্থার অভিযোগ নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি জানান, ‘আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছি, দরকার হলে ওরা হেঁটে ঘুরবে। প্রতিনিধি দলকে আটকালে আমি নিজে যাব ত্রিপুরায়। আগেও আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, ভয় পাই না।’

    বন্যাকবলিত নাগরাকাটা এলাকায় আহত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে দেখতে পেয়েছি এবং আরোগ্য কামনা করেছি। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, এই সময় এত গাড়ি নিয়ে কেন যাওয়া হলো।’

    তিনি আরও জানান, মিরি অঞ্চলে জরুরি ত্রাণ পাঠানো হয়েছে এবং প্রায় এক হাজার পর্যটককে বাসে করে নিরাপদে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

    রাজনীতিকরা মনে করছেন, মমতার এদিনের বক্তব্য রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র-সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও সরাসরি আক্রমণ রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা সৃষ্টি করেছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)