আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির স্বঘোষিত “গডম্যান” চৈতন্যানন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ক্রমশই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এনডিটিভির হাতে আসা কয়েকটি কলরেকর্ডিং প্রকাশ্যে আসার পর ঘটনাটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। এসব অডিও থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, কীভাবে চৈতন্যানন্দের মহিলা সহযোগীরা ছাত্রীদের প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে তাকে সাক্ষাৎ করতে বাধ্য করত, এবং একাধিকবার হোটেল ঘরে পাঠাত।
সূত্র জানায়, ৬২ বছর বয়সি চৈতন্যানন্দ সরস্বতী দিল্লির বসন্তকুঞ্জে অবস্থিত শ্রী শরদা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান ছিলেন। গত মাসে তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ, অভিযোগ—তিনি প্রতিষ্ঠানের মহিলা ছাত্রছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন চালাতেন। তার তিনজন মহিলা সহযোগী, যাদের মধ্যে অন্যতম ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অ্যাসোসিয়েট ডিন শ্বেতা শর্মা, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ, শ্বেতা শর্মাই ছাত্রীদের হোটেল ঘরে পাঠানোর মূল মধ্যস্থ ছিলেন।
একটি কলরেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, শ্বেতা শর্মা এক ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন—
শ্বেতা: “আগামীকাল অফিস থেকে বেরোনোর পর আমি হোটেলের নাম পাঠাব। স্বামীজি এসেছেন, ডিনারের জন্য যেতে হবে। উনি তোমার জন্য রুম বুক করেছেন, রাতটা ওখানেই থাকবে, সোজা সেখান থেকে অফিসে যাবে।”ছাত্রী: “ঠিক আছে, ম্যাম।”শ্বেতা: “তাহলে কাল অফিসে বেরোনোর সময় জামাকাপড় নিয়ো।”
আরেকটি অডিওতে আরও নৃশংস চিত্র ফুটে ওঠে। এক তরুণী বলেন, তাঁর “পিরিয়ড চলছে”, তাই দেখা করা সম্ভব নয়। তখন শ্বেতা শর্মা তিরস্কার করে বলেন, “এটা একটা অজুহাত, বাজে কথা!” ছাত্রীটি বলেন, “না ম্যাম, এটা অজুহাত নয়, সত্যিই আমার পিরিয়ড চলছে।” উত্তরে শ্বেতা বলেন, “তুমি দেখা এড়াতে চাও, তাই বলছো। স্বামীজি রাগ করবেন, নম্বর কেটে দেবেন। তাহলে নিজের হোটেল নিজেই বুক করো।” এমনকি অসহায় তরুণীটি শেষে বলেন, “ম্যাম, আমি ছবি পাঠিয়ে দেব, আর কী করব?”
এই কলরেকর্ডিংগুলি প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ছাত্রীরা মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় চাকরি ও সার্টিফিকেটের ভয় দেখিয়ে তাদের জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হত।
তদন্তে জানা গিয়েছে, চৈতন্যানন্দ সরস্বতী প্রায়ই দিল্লি ও অন্যান্য শহরের পাঁচতারা হোটেলে উঠতেন। সফরে গেলে ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং “তোমার পালা এসেছে” বলে চাপ সৃষ্টি করতেন। কেউ অস্বীকার করলে বলা হত, তার হোটেল বুকিং বাতিল হবে, নিজেকে নিজে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
চৈতন্যানন্দের আসল নাম পার্থ সারথি রুদ্র। পরে তিনি একাধিকবার নাম পরিবর্তন করে হন স্বামী পার্থসারথি, তারপর চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। আগের ছবিতে তাকে সাদা পোশাকে দেখা গেলেও পরে তিনি গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করেন। সূত্রের দাবি, তিনি একসময় রামকৃষ্ণ মিশনে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বহিষ্কৃত হন।
চৈতন্যানন্দ দাবি করেন, তিনি শিকাগো ইউনিভার্সিটির বুথ স্কুল অব বিজনেস থেকে এমবিএ ও পিএইচডি করেছেন এবং সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি পেয়েছেন। কিন্তু দিল্লি পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, এসব দাবির বেশিরভাগই ভুয়ো হতে পারে। তিনি নিজেকে “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লেখক” বলে পরিচয় দেন এবং দাবি করেন, ২৮টি বই ও ১৪৩টি গবেষণাপত্র লিখেছেন।
দিল্লি পুলিশের বিশেষ দল এই মামলার আর্থিক ও প্রশাসনিক দিকও খতিয়ে দেখছে। শ্বেতা শর্মা ও অপর দুই সহযোগীর জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, ছাত্রছাত্রীদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপে রেখে তাদের ‘আধ্যাত্মিক সেবা’-র নামে যৌন শোষণ করা হত। এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে—একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন ভয়াবহ নির্যাতন এতদিন অগোচরে রইল কীভাবে? তদন্তকারীরা এখন চেষ্টা করছেন, আরও কতজন ভুক্তভোগী রয়েছেন, এবং এই “বাবা”-র ছদ্মবেশী সাম্রাজ্যের নেপথ্যে কারা যুক্ত ছিল তা উদ্ঘাটন করতে।