আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজকের যুগে মোবাইল ফোন যেন শিশুদের সর্বক্ষণের সঙ্গী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলস দেখা বা গেম খেলার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকছে তারা। এই অতিরিক্ত আসক্তি যে শুধু তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে তাই নয়, প্রভাব ফেলছে শরীরেও। এই ভয়াবহ সমস্যাটি তুলে ধরতে গিয়েই সম্প্রতি বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি স্কুল 'স্কলার্স এডুকেয়ার'।
স্ক্রিন টাইম কমানোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ যে পথ বেছে নিয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। শিশুদের শেখানোর জন্য ভয় দেখানোর এই কৌশলকে অনুচিত বলেই মনে করছেন অধিকাংশ মানুষ।
স্কুলের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, তিন জন শিক্ষিকা মোবাইল ফোনের কুপ্রভাব নিয়ে একটি নাটক করছেন। এক জন শিক্ষিকা শিশু সেজে মোবাইলে আসক্তের মতো আচরণ করছেন, এবং বাকি দু'জন অভিভাবক ও চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।
ভিডিওর শুরুতে দেখা যায়, শিশুবেশী শিক্ষিকাটি অনবরত ফোনে স্ক্রল করে চলেছেন এবং খাবার খেতেও অস্বীকার করছেন। তাঁর মা ফোন কেড়ে নিলে সে খিটখিটে হয়ে উঠছে। ফোন ফেরত পাওয়ার পরেই কেবল খাচ্ছে। ভিডিও যত এগোতে থাকে, চরিত্রটির চোখে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। এটি মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের শারীরিক কুপ্রভাবকে তুলে ধরে।
এর পরেই এক জন শিক্ষিকা চিকিৎসকের ভূমিকায় প্রবেশ করেন। তিনি চোখ পরীক্ষা করে একটি ইঞ্জেকশন দেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই চোখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। এর মাধ্যমে স্থায়ী ক্ষতি বা দৃষ্টিশক্তি হারানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
এই অভিনয় দেখে উপস্থিত শিশুরা দৃশ্যতই আতঙ্কিত এবং আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। শিক্ষিকারা যখন তাদের প্রশ্ন করেন, তারা ফোন ব্যবহার করতে চায় কি না, তখন অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়। নাটকের শেষে শিক্ষিকারা কড়া বার্তা দেন, "দয়া করে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার কোরো না।"
ভিডিওটি পোস্ট করার পরেই দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। একইসঙ্গে নেটমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেউ কেউ এই গুরুতর সমস্যাটি তুলে ধরার এহেন সাহসী প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও, অধিকাংশই এই পদ্ধতিকে শিশুদের জন্য মানসিক আঘাত এবং বাড়াবাড়ি বলে নিন্দা করেছেন।
এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী ঋদ্ধিমা পণ্ডিত এবং উদ্যোগপতি পারুল গুলাটিও। ঋদ্ধিমা হাসির ইমোজি দিয়ে মন্তব্য করেন, "আমিও আর দেখব না।" পারুল লেখেন, "বিষয়টি বড্ড তাড়াতাড়ি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেল।"
তবে প্রশংসাও মিলেছে। এক জন মন্তব্য করেছেন, "শক্তিশালী বার্তা। শিশুদের মোবাইলের বিপদ সম্পর্কে আগে থেকেই জানানো উচিত।" অন্য এক জন লিখেছেন, "আমার দেখা অন্যতম সেরা ভিডিও। এই প্রজন্মের জন্য এমন ভিডিওরই প্রয়োজন, কারণ বাবা-মায়েরা খুব সহজেই বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দেন।"
তবে নিন্দার স্বরই ছিল জোরালো। এক জন লিখেছেন, "এটি চূড়ান্ত ভয়ানক! এই ছোট ছোট শিশুদের বাবা-মায়েদের শিক্ষিত করুন। আপনারা এমন একটা জায়গায় শিশুদের আতঙ্কিত করছেন, যেখানে তাদের সুরক্ষিত বোধ করানোর কথা। স্ক্রিন ক্ষতিকারক নয়! অভিভাবকদের শেখান সীমা এবং সংযম সম্পর্কে।"
আরেক ব্যবহারকারীর মন্তব্য, "ছোটদের মনে গভীর ভয় তৈরি করতে অবৈজ্ঞানিক এবং ভুয়ো প্রদর্শন আদৌ ভাল কোনও শিক্ষাপদ্ধতি কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। মোবাইলের নেশা বাস্তব, কিন্তু এটি একটি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও। তাই একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত প্রয়োজন।"
স্কুলের উদ্দেশ্য হয়তো সচেতনতা বাড়ানোই ছিল, কিন্তু তার পদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি সমস্যা, কিন্তু তার সমাধান হিসেবে ভয় দেখানো বা অবৈজ্ঞানিক প্রদর্শন কখনওই সঠিক পথ হতে পারে না।