• ২০০৩ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে ভোটার তালিকা সংশোধনে অর্ধেক সময় নিল নির্বাচন কমিশন, নির্দেশিকা দেখাল বড় পার্থক্য...
    আজকাল | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, বিহারে চালানো বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন (Special Intensive Revision বা SIR) ২০০৩ সালের নির্দেশিকার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। কিন্তু সেই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসার পর দেখা গেছে, দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ২০০৩ সালের নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা ছিল, নাগরিকত্ব যাচাই করা গণনাকারীর কাজ নয়। সেই বছর সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়াটি চলে ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে—যা ২০২৫ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অথচ ইসি আদালতে দাবি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে “তাড়াহুড়ো করে কাজ করার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল এবং ভ্রান্ত”।

    ২০০৩ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিহারের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে (CEO) ২০০২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যমান ভোটার তালিকা একত্রিত করার রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছিল। ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে প্রাথমিক তালিকা মুদ্রণ শেষ করে ১৬ জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল বাড়ি-বাড়ি যাচাইয়ের কাজ, যা চলেছিল ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর খসড়া তালিকা তৈরির জন্য দুই মাস সময় নির্ধারিত ছিল। ১৩ অক্টোবর সেই খসড়ার সার্টিফিকেট পাঠানো এবং ১৬ অক্টোবর প্রকাশ নিশ্চিত করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় ছ’মাস সময় লেগেছিল।

    এর বিপরীতে, ২০২৫ সালের SIR প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২৪ জুনে এবং শেষ হয়েছে মাত্র তিন মাসের মধ্যে—৩০ সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে ২৫ জুন থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ, ১ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাবি-আপত্তি গ্রহণ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাছাড়া, ২০০৩ সালে নির্দেশিকা অনুযায়ী গণনাকারীদের প্রশিক্ষণ “যথেষ্ট আগে এবং পরিপূর্ণভাবে” সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন ঘোষণার পরের দিন থেকেই (২৫ জুন) প্রশিক্ষণ ও তালিকা সংগ্রহ একসঙ্গে শুরু করে।

    ২০০৩ সালের নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে, অর্থাৎ ২০০৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দুই বছর আগে। কিন্তু ২০২৫ সালে বিহার বিধানসভা ভোট নির্ধারিত নভেম্বরের ৬ ও ১১ তারিখে—আর তার ঠিক এক মাস আগে শেষ হয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ।

    ২০০৩ সালে EPIC কার্ড ছিল ভিত্তি, ২০২৫-এ বাদ পড়ল নিজেরই জারি করা পরিচয়পত্র। ২০০৩ সালের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা ছিল, ভোটার তালিকার সংশোধন “বিদ্যমান তালিকাকে ভিত্তি করে বাড়ি-বাড়ি যাচাইয়ের মাধ্যমে” করা হবে। তাতে আরও বলা হয়েছিল, যেহেতু ভোটার তালিকায় EPIC (Electoral Photo Identity Card) নম্বর রয়েছে, তা যাচাই  করতে হবে এবং যাচাইয়ের সময় গণনাকারীকে ভোটার বা তার পরিবারের সদস্যের EPIC কার্ড দেখতে বলতে হবে।

    কিন্তু ২০২৫ সালের SIR-এ এই EPIC কার্ডকেই ভোটার যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভোটার আইডি, আধার ও রেশন কার্ড—এই তিনটি সবচেয়ে সহজলভ্য নথিও বাদ রাখা হয়েছিল ১১টি নির্ধারিত প্রমাণপত্রের তালিকা থেকে। নির্বাচন কমিশনের  জুলাই মাসের হলফনামায় বলা হয়েছিল, যেহেতু নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি হচ্ছে, তাই EPIC কার্ড ব্যবহার করলে “পুরো প্রক্রিয়াটি অর্থহীন” হয়ে যাবে।

    তাদের বক্তব্য ছিল, “EPIC যেহেতু আগের ভোটার তালিকার থেকে নেওয়া, তাই তা নতুন তালিকা প্রস্তুতির যাচাই প্রক্রিয়ার বিকল্প হতে পারে না।”তবে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পর, SIR শুরু হওয়ার ৭৭ দিন পর ইসি আধারকে একটি গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্র হিসেবে অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়।

    ইসির ওয়েবসাইট বা ওয়েব আর্কাইভে ২০০৩ সালের ওই নির্দেশিকা নেই। তবে সেই নির্দেশিকার অংশবিশেষ ২০২৫ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টে ইসির হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। এখন ওই নির্দেশিকার সম্পূর্ণ কপি জনস্বার্থ মামলার প্রধান আবেদনকারী—অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)-এর পক্ষ থেকে আদালতের লিখিত জমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই নির্দেশিকাগুলি প্রকাশ্যে আসায় স্পষ্ট হয়েছে, ২০০৩ সালের মতো নয় ২০২৫ সালের সংশোধন প্রক্রিয়া—সময়, পদ্ধতি ও নথি ব্যবহারের ক্ষেত্রে—সব দিক থেকেই মৌলিকভাবে আলাদা।

    ২০০৩ সালে ছ’মাস ধরে ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল, EPIC কার্ড ছিল তার মূল ভিত্তি এবং নির্বাচন থেকে দুই বছর আগেই কাজ শেষ হয়েছিল। ২০২৫ সালে মাত্র তিন মাসে সংশোধন শেষ হয়েছে, EPIC ও আধার বাদ দিয়ে নতুন নথি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা হয়েছে, আর নির্বাচন এক মাস পরেই। তবুও নির্বাচন কমিশনের দাবি—“তাড়াহুড়োর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।”
  • Link to this news (আজকাল)